২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৪:০৯ অপরাহ্ন
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি পুনরায় উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৯-২০২৩
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি পুনরায় উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি

জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার আসামি সহিদুর রহমান লিপনকে পুনরায় সভাপতি পদে নিযুক্ত করে বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা তাঁতী লীগ। গতকাল সোমবার জামালপুর জেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রুকু এবং সদস্যসচিব আরমান হোসেন সাগরের যৌথ স্বাক্ষরে আগামী ৩ বছরের জন্য সহিদুর রহমান লিপনকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নিযুক্ত করে দলীয় প্যাডে ৭১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করা হয়। 


সহিদুর রহমান লিপন উপজেলার মালিরচর তকিরপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল করিমের ছেলে। গত ১৭ জুন বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদে থেকে লিপনকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। 


মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলার এজাহারে ১১ নম্বর আসামি করা হয় উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি সহিদুর রহমান লিপনকে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নাদিম হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন তাঁতী লীগ নেতা লিপন। 


হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি লিপনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি পদে নিযুক্ত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবার।  


সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া এবং এজাহারভুক্ত আসামিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি পদে নিযুক্ত করায় আমরা বিস্মিত। মূলত হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে মুক্ত করতেই লিপনকে তাঁতী লীগের লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি করা হয়েছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে তাঁতী লীগ থেকে লিপনকে বহিষ্কার করা হোক।’ 


সহিদুর রহমান লিপন এলাকায় না থাকায় ও তাঁর ব্যবহার করা মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।  


জামালপুর জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন রুকু বলেন, ‘সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় সহিদুর রহমান লিপনকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছিলাম। নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকতেই পারে। এখন তিনি জামিনে আছেন। সে কারণেই তাঁকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’


সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, ‘একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামিকে ক্ষমতাসীন সহযোগী সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি পদে দায়িত্ব দেওয়া মানে আসামিকে পুরস্কৃত করার শামিল।’ 


সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের জামালপুর ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) পরিদর্শক গোলক চন্দ্র বসাক বলেন, ‘সম্প্রতি মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। মামলার তদন্তের বিষয়ে আমি ঢাকায় আছি। মামলার ডকেট না পাওয়ায় আসামি সহিদুর রহমান লিপন জামিনে আছেন কিনা, সেটা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। মামলার তদন্ত চলছে।’ 


উল্লেখ্য, উপজেলার সাধুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ১৪ জুন রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন বাংলানিউজের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ও মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর তিনি মারা যান। 


এ ঘটনায় ১৮ জুন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নামোল্লেখে অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে সহিদুর রহমান লিপনের সংশ্লিষ্টতা জোরালোভাবে ওঠে আসায় দলীয় ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষুন্নের অভিযোগে এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৭ জুন বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদে থেকে লিপনকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় জেলা তাঁতী লীগ।


শেয়ার করুন