চলমান সংকটের আঁচ লাগেনি সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৮ মেগা প্রকল্পে। অনেক প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট হলেও এগুলো ছিল ব্যতিক্রম। এসব প্রকল্পের বরাদ্দ সবসময়ই ছিল চাহিদা মতোই। কিন্তু সে তুলনায় কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি। এখন পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শতভাগ ছুঁই ছুঁই করছে। বাকি পাঁচটি রয়েছে পিছিয়ে। শুরু থেকে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত এসব প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে দুই লাখ সাত হাজার ৯২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৬৬ শতাংশে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এগিয়ে থাকা তিন প্রকল্প হলো পদ্মা সেতু, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। এগুলোর বাস্তব অগ্রগতি যথাক্রমে ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ৯৫ দশমিক ৬৩ এবং ৯৩ দশমিক ১২ শতাংশ। এদিকে পিছিয়ে থাকা পাঁচ প্রকল্প হচ্ছে-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, মেট্রোরেল লাইন-৬, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। এগুলোর বাস্তব অগ্রগতি যথাক্রমে ৬০ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ৭৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৮০ শতাংশ, ৮২ এবং ৮৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রতি চার মাসে একবার ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে থাকি। আমি নিজেও বেশ কয়েকটি প্রকল্প দেখতে গিয়েছিলম। এটা বাধ্যতামূলকভাবেই করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়। তিনটি প্রকল্প প্রায় শেষের পথে। বাকিগুলোও যে খুব বেশি পিছিয়ে সেটি বলা যায় না। তবে জোর করে তো আর অগ্রগতি বাড়ানো যাবে না। এখন পর্যন্ত এসব প্রকল্প অনট্রাকেই আছে। অক্টোবরের মধ্যেই যে সব শেষ করতে হবে এমন কোনো বিষয় নেই।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়-
পদ্মা সেতু : ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ২৯৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে সম্প্রতি ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প : এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ২০ শতাংশ। এছড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর : এ প্রকল্পটি চার হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে তিন হাজার ৭৫২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ১২ শতাংশে।
এদিকে মেট্রোরেল লাইন-৬ : এ প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। এখন প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যাত্রী চলাচল করছে এ অংশে। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে আগামী ২০ অক্টোবর মতিঝিল পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। এখন চলছে ট্রায়াল। শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৮১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক এর আগে যুগান্তরকে বলেন, আশা করা যাচ্ছে সময়ের আগেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করা হবে। এখন ৮০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন চলছে। মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে কয়েক লাখ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে। সেই সঙ্গে বর্তমান ঋণ পরিশোধের জটিলতা অব্যাহত আছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ : গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৯ হাজার ৯৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত কার্যক্রম : এ প্রকল্পের সঙ্গে ১২টি প্রকল্প যুক্ত আছে। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৩০ শতাংশে। দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ : এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে আট হাজার ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ।