২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:০৭:৫০ পূর্বাহ্ন
ভিসা নিষেধাজ্ঞা: প্রশাসনের কেউ কেউ চাপ বোধ করছেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২৩
ভিসা নিষেধাজ্ঞা: প্রশাসনের কেউ কেউ চাপ বোধ করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু হওয়াকে সরকারের ওপর চাপ বলে মনে করছেন প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের এমন চাপকে সরকার পাত্তা না দিলেও প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকে চাপ অনুভব করছেন। তাঁরা বলছেন, গত দুইবারের মতো সহজ হবে না এবারের নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা আগের মতো বাড়তি কোনো দায়িত্ব নেবেন না। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে তাঁরা রাজি হবেন না। 


তবে প্রশাসনের বড় একটি অংশ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রশাসনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, কর্মকর্তাদের একটি ছোট অংশই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করে থাকে। আবার তাদের মধ্যেও গুটি কয়েক কর্মকর্তার পরিবার-পরিজনের যুক্তরাষ্ট্র-সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। দু-একজনের সংশ্লিষ্টতা পুরো প্রশাসনের জন্য বড় কিছু নয়।


ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ তাঁরা দেখছেন না। তফসিলের পরই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরকারি সব দপ্তর ইসির অধীনে চলে যাবে। তখন ইসির নির্দেশেই মাঠ প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করবে। আইন মেনে কেউ নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ভিসা নীতির চাপ না থাকলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা আইন অনুযায়ী তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন বলেও জানান তাঁরা।


তবে একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত দুইবারের মতো নির্বাচন যে এবার হবে না, সে বিষয়ে প্রশাসনের মোটামুটি সবাই নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইইউভুক্ত দেশগুলোর দৌড়ঝাঁপ দেখলেই বিষয়টি বোঝা যায়। নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগের কারণে অনেক কর্মকর্তা আরও বেশি সতর্ক হবেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে নানা কারণে যাতায়াত করতে হয়, তাঁরা কিছুটা হলেও শঙ্কিত। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়!’


সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কার কার ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে এ বিষয়ে যা এসেছে, তাতে মনে হয়েছে, এটা সরকারের ওপর একটা প্রেশার (চাপ) মাত্র। তারা চাইছে, সরকার নমনীয় হোক। এটা সরকারের ব্যাপার। সরকার অনড় থাকলেও অন্য রাষ্ট্র কিছুই করতে পারবে না। এতে হয়তো বিদ্যমান সম্পর্ক শিথিল হবে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যেও একধরনের চাপ থাকবে। তবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাজেটের ২৮ শতাংশ দেয়।’


এ প্রসঙ্গে সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিষয়ে এখনো কোনো বিষয় ক্লিয়ার না। যতটুকু পত্রপত্রিকায় দেখলাম, তাতে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তার পাশাপাশি সরকারি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিষয়ও রয়েছে। তাতে যতটুকু মনে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। আমরাও তা-ই চাই। প্রশাসন যদি আইন ও বিধিবিধান মেনে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে, তাহলে ভয়ের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। আশা করি, শিগগির সমস্যার সমাধান হবে।’


শেয়ার করুন