২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:১৩:৫৮ অপরাহ্ন
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৩
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণ

ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকা-ে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ১৪তম শাহাদতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। ১৪ বছর আগে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। রাজধানীর বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহতদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ।

এছাড়াও শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্দুল হান্নান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসানসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা ও নিহতের স্বজনরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে। এ বছরের মধ্যেই এ মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকর করতে পারব বলে আমরা প্রত্যাশা রাখি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠেন না। কিন্তু সেদিন তিনি সকালবেলায়ই ঘুম থেকে উঠে গাড়িতে করে দুদিনের জন্য কোথায় যেন চলে যান। এ ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সরকার উৎখাতের চক্রান্ত ছিল।
সরকার ক্ষমতা নেওয়ার ৫০ দিনের মাথায় এ ধরনের ঘটনা সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে পছন্দ করে না, যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে দেখতে চায়নি তাদের ষড়যন্ত্রের অংশই এ ধরনের ঘটনা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার স্বজনরা পেয়েছেন। তারা যেন এ বিচারের সন্তুষ্ট হতে পারেন এ বিষয়ে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাব। তিনি বলেন, আমার জানামতে বেশিরভাগ শহীদ পরিবারের ধারণা, বিচার প্রক্রিয়া ও তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নেই। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল- এর আগে কিছু জানা গেল না, এটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি কোনো কিছুই আঁচ করতে পারেনি এসব বিষয়ে? আর তারা যদি আঁচ করতে না পারেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। এ ঘটনার উদ্দেশ্য ছিল মূলত সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া। এ ঘটনার তদন্ত যেভাবে হওয়া দরকার ছিল, আমাদের এখানে সেটি সংঘটিত হয়নি। সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদের বের করে আনতে যে তদন্ত প্রক্রিয়া দরকার ছিল তা হয়নি। পত্রপত্রিকায় দেখতে পেয়েছি সেনাবাহিনী যে প্রতিবেদন তৈরি করেছিলÑ তার পূর্ণাঙ্গ যে চেহারা তার কোনো কিছুই দেশবাসী জানতে পারেনি।
তিনি বলেন, বিদ্রোহ, হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে বিচার হয়েছে। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাত হাজার সৈনিক, যারা দাবি করেন সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ তাদের মামলার শুনানি এখনো শেষ করা হয়নি। আমি দাবি করব, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, বিচার সংক্রান্ত যে সমস্যাগুলো রয়েছে, অতি দ্রুত সেগুলো সম্পাদন করে একটি সমাধান করা উচিত।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলায় ৮৪৬ জনকে আসামি করা করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। আর ২০১৭ সালে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের করা আপিল শুনানি শুরু না হওয়ায় হত্যা মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি আজও।
সামরিক বাহিনীকে মেধাশূন্য করতে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ ॥ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব দুর্বল ও দেশের সামরিক বাহিনীকে মেধাশূন্য করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ২০০৯ সালে পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, ‘ওই ঘটনার পেছনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র দায়ী। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে শহীদ সেনা দিবস ও জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হোক। শনিবার রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘২৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেনা দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ কথা বলেন। ১২ দলীয় জোট এ সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘পিলখানার ঘটনা ছিল অনাকাক্সিক্ষত। আজকে সে ঘটনা নিয়ে কথা বলা অত্যন্ত কষ্টকর। আজকেও দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের মন্ত্রীদের কেউ বলে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। কেউ বলে পারবেন না। আসলে তারা প্রলোভন দেখানো শুরু করেছে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ‘পিলখানায় যা ঘটেছিল তা নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেই ঘটনা ৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। 
তিনি বলেন, ‘সেসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র অনেক হুমকি দিয়েছে। তারা পিলখানা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বিডিআরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু পরবর্তী সরকার আ ল ম ফজলুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করেছে। ওই যে বিএসএফ পরাজিত হয়েছে, তার কারণে বিএসএফ ক্ষুব্ধ ছিল।’ 
সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পিলখানা হত্যাকা-ের ন্যায্য বিচার করবো। সেদিন কেউ পার পাবে না। সেই ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যাকা-ের বিচার আমরা করব। আমরা পরিবর্তন চাই। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘পিলখানার নারকীয় হত্যাকা-ের জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশও দায় এড়াতে পারে না। সেদিন কেন সেখানে মির্জা আজম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক গিয়েছিলেন? সেই জবাব দিতে হবে। আজকে কার কাছে আমরা বিচার চাইব?’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নির্মমভাবে শহীদ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেদিনের ঘটনা ঘটেছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। দেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল করতেই সেদিনের বর্বর ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, বাংলাদেশ এলডিপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল গণি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করীম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, ১২ দলীয় জোটের নেতা মুফতি জাকির হোসেন, রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, হান্নান আহমেদ বাবলু, রফিকুল ইসলাম মিন্টু, মিজান পাটোয়ারী, চাষী এনামুল হক, মাওলানা তরিকুল ইসলাম সাদী, এমএ পাশা প্রমুখ।

শেয়ার করুন