২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৫:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
খেলাপি ঋণ তিন মাসে বেড়েছে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১০-২০২৩
খেলাপি ঋণ তিন মাসে বেড়েছে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শকেরা বারবার বলছেন, বেনামি ঋণের প্রভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এই সাবধান বাণীতেও কমছে না খেলাপি ঋণ। বরং গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে খেলাপি ঋণ প্রায় ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বেড়েছে। এ বছর জুন শেষে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি গতকাল রোববার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বড় ঋণগ্রহীতারা ইচ্ছা করেই ঋণ শোধ করছেন না।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চ-জুন প্রান্তিকে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। ছয় মাসে (ডিসেম্বর ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) বেড়েছে ৩৫ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এ অঙ্ক দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।


খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, হঠাৎ করে এত বেশি খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ বিশ্লেষণ করা হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে। প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় জানানো হবে।


জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।


এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ খাতা-কলমে দেখানো হচ্ছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু বাস্তবে এই অঙ্ক অনেক বেশি। কারণ এখানে পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণের হিসাব নেই, এগুলো যোগ করলে আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যদি কোনো গ্রাহক চলতি বছরের জুনের মধ্যে ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দেন, তবে তিনি খেলাপি হবেন না। ফলে যাঁরা ঋণ নিয়ে কিস্তি শোধ না করে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, তাঁরা কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হওয়ার সুযোগ পান। তবে শুধু মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হয়। সাধারণত ব্যবসা শুরু বা শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে মেয়াদি ঋণ নেওয়া হয়। 


আইএমএফের শর্তও উপেক্ষা

জানা যায়, ডলার সংকটে পড়ে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশ পেয়েছে। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ আগামী নভেম্বরে ছাড় করা হতে পারে। ধাপে ধাপে ঋণ ছাড় করার ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। সবশেষ প্রতিবেদনমতে, বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হারও নির্ধারিত মাত্রার অনেক ওপরে। 


কঠোর হওয়ার তাগিদ

এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম মনে করেন, খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকার অর্থ ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। এতে করে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমবে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে, ফলে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে।সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাঁর মতে, এখন সুবিধা বন্ধ করে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যেন আইনের পথে গিয়ে বছরের পর বছর ঝুলে না থাকে। এ ছাড়া খেলাপিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। কঠোর অবস্থায় যাওয়া ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প উপায় নেই। 


শেয়ার করুন