২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৩০:২৮ অপরাহ্ন
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়নি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১০-২০২৩
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়নি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। দুনিয়াতে যেভাবে নির্বাচন হয় শাসনতন্ত্র মেনে, আমরা সেভাবে নির্বাচন করব। আমাদের শাসনতন্ত্রে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নেই। রোববার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন। অন্যদিকে পর্যবেক্ষক মিশনের অন্যতম প্রধান কার্ল এফ. ইন্ডারফুর্থ বলেছেন, তারা একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরা সবাই অত্যন্ত পরিপক্ব লোক। এরা আসছেন একটা অবাধ নির্বাচন অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করতে। তারা জানতে এসেছেন, একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমরা কী কী কাজ করেছি। তাদের নিজেদের কোনো মতামত নেই। তারা শুধু জানতে চেয়েছেন, কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা বলেছি, আমাদের এসব দেশে বেশ সংঘাত হয়। নির্বাচন হলে সংঘাত হয়। তিনি বলেন, আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করব। আমরা একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। যেখানে ভায়োলেন্সও হবে না। কিন্তু আমরা চাইলেই হবে না। সব দলমতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দরকার।

পর্যবেক্ষক দল সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কিছু বলেনি। এ সম্পর্কে কোনো আলোচনা করিনি। তবে আমরা চাই, সবাই নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু আমরা জোর করে কাউকে বলি না, নির্বাচনে অংশ নাও। সব দলকে ভোটে নিয়ে আসতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা নির্বাচন করতে চায় আমাদের দিক থেকে স্বাগতম। আসা না আসা তাদের সিদ্ধান্ত ও মাথাব্যথা।

ভোট কারচুপি নিয়ে এবং বেচাকেনা নিয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে থাকবে বার্তা দিয়ে মোমেন বলেন, আমরা কাউকে জোর করে ভোট দেওয়াই না বা কোনো দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করব না। আমরা চাই, তারা ইচ্ছেমতো ভোট দেবে। এ রকম ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা বলেছি, ক্যাম্পেইন প্রসেসে যেন কোনো ধরনের ভায়োলেন্স না হয়। যেন ভোট বেচাকেনা না হয় বা ভোট কারচুপি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক। আমরা চাই না কেউ জোর করে কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করুক।

একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ, একজনও বলেনি যে মার্কিন ঝড় আসবে। তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় একটু বেশি বাড়িয়ে বলে। আপনারা (গণমাধ্যম) এগুলো বানান। আপনাদের মাথা-মগজের মধ্যে কিছু গন্ডগোল আছে। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কথাও আসছে গণমাধ্যমে-এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এগুলো তো আপনারা ডেকে আনছেন। আপনারা কি নিষেধাজ্ঞা চান? আপনারা বোধ হয় চান। সেজন্য ডেকে আনছেন। তারা শুধু একটা ভিসানীতি করেছে। তারা একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম সরকার। এসব ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ১৫ জন সংসদ-সদস্য দেশটির সরকার প্রধানের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আপনারা ওসব নিয়ে অত চিন্তিত কেন? দুনিয়ার অনেক জায়গায় আমরা টাকা দিয়ে কথা বলাতে পারি। টাকা দিলে গান গাইবে।

স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে সমর্থন জানাবে মিশন : সফররত মার্কিন প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের অন্যতম প্রধান কার্ল এফ. ইন্ডারফুর্থ বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু বাংলাদেশ তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা এখানে অংশীজনদের কথা শুনতে এসেছি। একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনি প্রক্রিয়ার জন্য আমাদের সমর্থন জানাতে চাই।

মিশনের আরেক প্রধান বনি গ্লিক বলেন, এই যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের আগ্রহ এবং সমর্থন প্রদর্শন করে। আমরা মূল অংশীজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী বিশ্লেষণ প্রদান করব। এনডিআইর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসে যান ছয় সদস্যের মার্কিন পর্যবেক্ষক দল। সন্ধ্যায় সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। আজ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করবে দলটি। ৭ দিন অবস্থানকালে পর্যায়ক্রমে সরকারি সংস্থা, বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।

শেয়ার করুন