২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৪৭:২৪ অপরাহ্ন
বাগমারায় নৌকার সমর্থকদের দাপটে আতঙ্কে আছের ভোটাররা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৩
বাগমারায় নৌকার সমর্থকদের দাপটে আতঙ্কে আছের ভোটাররা

স্বতন্ত্র প্রার্থী এলাকার টানা তিনবারের এমপি। কিন্তু এবার নির্বাচনে এলাকায় তার তেমন পোস্টারই নেই। গোটা এলাকায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পোস্টার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এমপি এনামুল হক বলছেন, দিনে পোস্টার টানালে রাতেই তা খুলে নিয়ে যান নৌকার সমর্থকেরা। ফলে এলাকায় তার কোন পোস্টার থাকছে না। এনামুলের অভিযোগ, এলাকায় রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করেছেন নৌকার সমর্থকেরা। ফলে ভোটারদের মাঝেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এদিকে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি এনামুল হকের নিরাপত্তার জন্য গাণম্যান দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ওই এলাকায় উত্তেজনা আছে। ফলে প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এএসআই পদমর্যদার দুজন গাণম্যান দেয়া হয়েছে দুই প্রার্থীকে।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের প্রার্থী এনামুল হকের এ কথার সত্যতা পাওয়া গেল শনিবার বাগমারা উপজেলা গোয়ালকান্দি ও শ্রীপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে। এ দুটি ইউনিয়নের কোথাও এমপি এনামুলের কাঁচি প্রতীকের পোস্টার নেই। শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বললেন, ‘হামারেক এলাকায় তো খালি নৌকার পোস্টারই দেকিচ্চি। কাঁচি মার্কা একবার পোস্টার টানিয়ে গেছিল। একুন তো সেসব দেকিচ্চি না। মুনে হয় কেউ আবার খুইলি লিইয়ি গেলছে। নৌকার লোকজন বুলিছে, নৌকা ছাড়া কুনু কথা হোবি ন্যা।’

এ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তিনি তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর এনামুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিনবার তিনি দলের মনোনয়নে এমপি হয়েছেন। এবার মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ৮টি লিখিত অভিযোগ করেছেন। নৌকার প্রার্থী একের পর এক কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন, কিন্তু শান্ত হননি।

সবশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেঁউখালী গ্রামে নৌকার সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারীসহ চারজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমান, সমথর্ক গোলাম মণ্ডল, আয়ুব আলী ও শরিফ উদ্দিন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন কাঁচি মার্কার পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। এ সময় গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার, তার ছেলে শাওনসহ ৩০-৪০ জনের একটি দল কাঁচি প্রতীকের সমর্থকদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি।

গত ২ ডিসেম্বর বাগমারার তাহেরপুরে একটি মতবিনিময় সভায় আবুল কালাম আজাদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এনামুল হককে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন- তিনি নির্বাচিত হলে এনামুল হকসহ তার অনুসারীদের একদিনের মধ্যে বাগমারা ছাড়া করবেন। আর এনামুল প্রার্থী হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন- ১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে এমপি এনামুলকে বাগমারায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর কয়েকদিন পর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার সঙ্গে যারা ভালো ব্যবহার করবে, তাদের কাছে আমি ফেরেশতা। আর যারা খারাপ আচরণ করবে, তারা পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবে।’ তার এই সব বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। তার এ ধরনের বক্তব্যে কর্মী-সমর্থকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

গত ১৭ ডিসেম্বর বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সে হামলা চালান নৌকার সমর্থকেরা। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভবনের গ্লাসসহ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সের থাকা স্বাধীনতার ইতিহাস সম্মলিত চিত্রগুলো ভেঙ্গে ফেলে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানারগুলোও কেটে ফেলে হয়। এছাড়া কমপ্লেক্সের সামনে থাকা রেলিংগুলো লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে নষ্ট করা হয়। এমপি এনামুল হক ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে জমি রেজিষ্ট্রি করে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলা এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর কার্যালয় রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের পক্ষে কাজ করায় সেখানে হামলা চালানো হয়।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এমপি এনামুল হক বলেন, ‘গোটা উপজেলাজুড়ে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। প্রচারণা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আমার অন্তত ৪০ জন নেতকর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হামলার ঘটনা ঘটছেই। এ কারণে কয়েকটি ইউনিয়ন ও তাহেরপুর এলাকায় এ পর্যন্ত কোন পোস্টারই লাগানো যায়নি।

এমপি এনামুল হক আরো বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে এই আসনের সংসদ সদস্য। কিন্তু কখনো গানম্যান ব্যবহার করিনি। অথচ এখন নিজের নিরাপত্তার জন্য গান ম্যান ব্যবহার করতে হচ্ছে। যদিও আমি গারম্যান চাইনি। আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রশাসন থেকে গান ম্যান দেয়া হয়েছে। তবে বাঘমারাবাসী আমার নিরাপত্তা দিবেন।

নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনছেন, সেগুলো সঠিক নয়। কোথাও পোস্টার টানাতে বাধা দেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনই উল্টো হুমকি দিচ্ছেন বলে নৌকার প্রার্থী অভিযোগ করেন।


শেয়ার করুন