অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হতেন জার্জিস কাদির। সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন সব সময়। অবসর গ্রহণের পর এই ব্যক্তি যোগ দিয়েছেন বিএনপিতে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনীতি, মানবাধিকার, শিক্ষাব্যবস্থা- সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।
জার্জিস কাদির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। সবশেষ রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের এপ্রিলে তিনি এ কলেজে যোগ দিয়ে ২০২০ সালের ৭ মে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার শুকাশ ইউনিয়নের মৌগ্রামে। তিনি রাজশাহীতে বসবাস করলেও অবসরের পর গ্রামে যাতায়াত বেড়েছে। এলাকায় তিনি বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান বলে জানিয়েছেন।
শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাজির হন জার্জিস কাদির। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ফুল দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন।
বিএনপিতে যোগ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জার্জিস কাদির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতির কাঠামো ভেঙে পড়েছে। কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। মানবাধিকার বলে দেশে কিছু নেই। শিক্ষাব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। যখন যতবার খুশি পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করা হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এমনকি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ভোটের অধিকার নেই। এ জন্য আমি বিএনপিতে যোগ দিয়েছি।’
এসব কথা আগে বলেননি কেন, এমন প্রশ্নে জার্জিস কাদির বলেন, ‘আমার আত্মীয়-স্বজনেরা বিভিন্ন দল করে। কেউ বিএনপি, কেউ আওয়ামী লীগ করে। আমি সরকারী চাকরি করতাম। রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। তখন সরকারের বিপক্ষে বলারও সুযোগ ছিল না। এখন চাকরিতে নেই, বলছি।’
জার্জিস কাদিরকে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশ নিতে দেখা গেছে। ২০২১ সালের ২৫ মে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হকের মালিকানাধীন পোশাক কারখানায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে অংশ নিতে দেখা যায়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি এনামুল হক। নিউ ডিগ্রি কলেজের
অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েই তার বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তারপরও তিনি শেষ পর্যন্ত রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
এখন রাজনীতিতে নিজের পরিকল্পনা জানতে চাইলে জার্জিস কাদির বলেন, ‘আপাতত বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা। এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে অবশ্যই নাটোর-৩ আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন কিনব। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনেও অংশ নেব। আমি তো মনে করি প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্যতা আমার মাঝে আছে।’