২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৭:২৭:৫৬ অপরাহ্ন
লুটপাটের আখড়া রেলওয়ে: এক বছরেই ৪১৯ কোটি টাকার ঘাপলা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১০-২০২৩
লুটপাটের আখড়া রেলওয়ে: এক বছরেই ৪১৯ কোটি টাকার ঘাপলা

লুটপাটের আখড়া হিসেবে পরিচিতি রেল বিভাগ। এবার এই বিভাগের এক অর্থ বছরেই ৪১৯ কোটি কোটি ১০ লাখ টাকার অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে নীরিক্ষা প্রতিবেদনে। ঢাকায় অবস্থিত রেল ভবন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে এ ব্যাপক লুটপাটের তথ্য উঠে এসেছে নীরিক্ষা প্রতিবেদনে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধিনে বাংলাদেশ রেলওয়ের কম্প্রট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল বিভাগ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের কমপ্লায়েন্স নীরিক্ষা প্রতিবেদনে কেনাকেটা, ভ্যাট কর্তন না করা, অতিরিক্ত মালামাল কেনা, বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মালামাল কেনা, মালামাল কিনে সেগুলো গায়েব, ঠিকাদারকে জরিমানা না করাসহ নানা খাতে এ অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে একটি মোবাইল কোম্পানীর সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল লিজ সম্পর্কিত মূল চুক্তিপত্র উপেক্ষা কওে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে গ্যারান্টেড এ্যানুয়াল রেন্টাল পুনঃনির্ধারণ করায় রেলওয়ের ক্ষতি হয়েছে ৩০৯ কোটি ৯৩ লাখ তিন হাজার ৯০৪ টাকা। সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া নীরিক্ষা প্রতিবেদনের একটি কপি কালের কণ্ঠের হাতে এসে পৌঁছেছে।


অডিট প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে ৩৬টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনিয়মের কয়েকটি খাত তুলে ধরা হলো-রেলওয়ে বিভাগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও নির্ধারিত হার অপেক্ষা কম হাওে ভ্যাট কর্তন করে বিল পরিশোধ করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৩ টাকা। অনিয়মিতভাবে সম্পূরক চুক্তি সম্পাদন করে সরকারের আর্থিক হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৮ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৫ টাকা। প্রকৃত পরিমাণের চাইতে অতিরিক্ত পর্দা ও ফলস সেলিংয়ের কাজ দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৩ টাকা। চুক্তি অপেক্ষা রেল লাইনের জন্য গ্লাভেনিসিড এইচ বিম স্লিপার কম সরবরাহ দেওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৩০২ টাকা। মালামাল ব্যবহার না করেও আর্থিক খরচ দেখানোয় ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার ১৮৫ টাকা। অতিরিক্ত মালামাল কেনা হলেও সেগুলো মজুদ না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৭ টাকা। একটি টিনসেড অফিস কক্ষের মেরামত বাবদ ব্যয় করে আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৭১ হাজার ৩০০ টাকা।


চুক্তি অনুযায়ী লাগেজ ট্রলি, হ্যান্ড বেরো ট্রলি ও ক্যাশসেফ সরবাহ না করে এবং ১১৯টি পর্দা মজুদে না থাকায় ক্ষতি হয়েছে ৫৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬ টাকা। বাজার দর উপেক্ষা করে উচ্চ দরে মালামাল কেনায় ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৮ টাকা। এর মধ্যে একটি ৭৫ হাজার কম্পিউটার কেনা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকায়। ৩ হাজার ৩০০টি বিজি পিএসসি স্লিপার স্থাপন না করে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার টাকা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে, রাজশাহীর সরাঞ্জম শাখার মাধ্যমে চুক্তির মাধ্যমে মালামাল কেনা হলেও বাস্তবে সেগুলো না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৮১ টাকা। টিকিটপ্রতি কমিশন প্রদানের চুক্তি না করে যাত্রী প্রতি কমিশন প্রদানের চুক্তি করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৮ টাকা। এর বাইরেও আরও বিভিন্ন খাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা তোছরুপ করা হয়েছে ওই এক বছরে।


রেলওয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এসব অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের তৎকালীন প্রধান সরাঞ্জম কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন সরকারকে বরখাস্ত করাসহ তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়। তবে পার পেয়ে যান পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও ওই আর্থিক বছরে রেল বিভাগের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী, দুই অঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীসহ আরও অনেকে। তাঁদেও বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এথনো।


এস বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালকুদার বলেন, ২০১৮-১৯ সালে আমি জিএম হিসেবে ছিলাম না। কাজেই ওই সময়ে কি কি অনিয়ম হয়েছে, সেটি নিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়।


শেয়ার করুন