আর এক দিন পরই রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার প্রত্যাশা, বিএনপি এই নির্বাচনে না থাকলেও ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে। রাজশাহী নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে একটি রেস্তোরাঁয় এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
একেবারে ফাঁকা মাঠে নির্বাচন করছেন কি না, এই প্রশ্নে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘খুশি হতাম এখানে বিএনপিসহ সব দলই যদি নির্বাচনে অংশ নিত। কিন্তু নানাভাবে তাদের অনুরোধ করার পরও নানা শর্ত আরোপ করে বর্জন করেছে। সামনে সংসদ নির্বাচনেও তারা কী করবে, তা-ও জানি না। কেউ যদি না আসে, তাহলে কিছু করার নেই। যারা এসেছে, তাদের নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। বিএনপি ও জামায়াতের অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। বিএনপি তাদের প্রার্থীদের বহিষ্কার করলেও জামায়াত কিন্তু কিছু বলেনি। কাজেই প্রার্থীরা সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচন করবেন, এটাই স্বাভাবিক।’
খায়রুজ্জামান আরও বলেন, ‘মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন চারজন। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী বরিশালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বর্জন করেছেন। সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এখন মোট তিনজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে আশা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদেও অনেক প্রার্থী আছেন। তাঁরা সবাই মিলে তাঁদের ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বলতে পারি যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই নির্বাচনে সর্বতোভাবে আসবেন। আমি আশা করছি, ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে।’
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে খায়রুজ্জামান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে বড় ধরনের কোনো ঘটনার আশঙ্কা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা ইতিমধ্যে তারা করেছে। আমরাও তিন-চারটি-পাঁচটি কেন্দ্রের কথা বলেছি, এখানে সমস্যা হলেও হতে পারে। তবে সেটা নিশ্চয়ই বড় আকারের কিছু হবে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সজাগ থাকবেন। তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া আছে।’
রোববার রাতে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচন কর্মকর্তার বাসায় অবরুদ্ধ থাকার বিষয়ে নৌকার এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘বিষয়টি এখনো খুব অস্পষ্ট। কারণ, যিনি গেছেন, তিনি কেন গেছেন, আবার যিনি অ্যালাউ করেছেন নির্বাচন কমিশনের একজন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে, তিনি কেন অ্যালাউ করলেন। এগুলো তো তদন্তের বিষয়। আপনারাও খতিয়ে দেখতে পারেন। আমি ভাসা-ভাসা দেখেছি। তাই এই বিষয়ে বিশদ মন্তব্য করা ঠিক নয়।’
খায়রুজ্জামান বলেন, ‘রাজশাহীর অবকাঠামো উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। এবার আমার লক্ষ্য কর্মসংস্থান। আমার নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথম বিষয়টি আছে কর্মসংস্থান। নগরবাসী আরেকবার সুযোগ দিলে এবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, সহসভাপতি নাইমুল হুদা রানা, সহসভাপতি সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, সহসভাপতি তবিবুর রহমান শেখ, সহসভাপতি নওশের আলী, যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার প্রমুখ।
বিএনপি আগে থেকেই ভোট বর্জন করেছে। এরপর রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মোট চারজন মেয়র প্রার্থী ছিলেন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীর ওপর হামলার জেরে রাজশাহীর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলম কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ভোট বর্জন করেছেন। এর পর থেকে তিনি নির্বাচনী প্রচারে নেই। প্রচারের মাঠে নৌকার প্রার্থী ছাড়া দেখা যাচ্ছে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের সাইফুল ইসলাম স্বপন ও জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী লতিফ আনোয়ারকে।
তবে এর মধ্যে গত কয়েক দিনে একাধিকবার গণমাধ্যমে কথা বলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীও। এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রে কথা বলছেন বলে জানিয়েছেন।