২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫০:৪৪ অপরাহ্ন
রেমিটেন্সে ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৫-২০২৪
রেমিটেন্সে ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ

হুন্ডি রোধে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে বিদ্যমান আর্থিক প্রণোদনা ৩ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠালে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি ১৩ ধরনের অ-আর্থিক সুবিধা পাবেন প্রবাসীরা। আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট সামনে রেখে জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়।


বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি প্রবাসী রয়েছেন এবং তাদের কাছ থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসে। হুন্ডি রোধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনা গেলে আরও বেশি ডলার যোগ হতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে। সম্প্রতি ডলারের মূল্য ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বাজারে আরও বেশি মূল্যে ডলার বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রণোদনা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হলে বৈধ পথে রেমিটেন্স আহরণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।


জানা গেছে, নতুন বাজেট প্রণয়নে বেশকিছু সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। এর মধ্যে বৈধ পথে প্রবাসী আয় দেশে নিয়ে আসার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং ডলার সংকটের এই সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসলে রিজার্ভ বাড়বে বলে মনে করেন কমিটির সভাপতি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।


 


আগামী ৬ জুন বাজেট ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয় জাতীয় সংসদ ভবনে। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।



এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, মূলত সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রেমিটেন্সের ওপর প্রণোদনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করেছিলেন। সেটির ধারাবাহিকতায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার বিষয়টি এখনো অব্যাহত আছে। এবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ফের প্রণোদনা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে। আশা করা হচ্ছে, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করে রেমিটেন্সের ওপর ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা বাজেটে দেওয়া হতে পারে। 

জানা গেছে, বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর বিষয়ে কি কি করণীয় তা নিয়ে কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে তা ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এখন বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও কমিটি রেমিটেন্সে প্রণোদনা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।


 


এ ছাড়া কমিটির বৈঠকে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিংও আর্থিক খাত, প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা, ভর্তুকি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানোসহ সামগ্রিক বাজেট প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এদিকে, বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেমিটেন্স আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলমান আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অ-আর্থিক প্রণোদনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা।


রেমিটেন্স প্রেরণকারী ও তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ স্মার্ট কার্ড প্রদান করা যেতে পারে।  যা বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা যেতে পারে। স্মার্ট কার্ড গ্রহণকারীদের পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে বিশেষ প্রাধিকার প্রদান করা যেতে পারে।


স্মার্ট কার্ড গ্রহণকারী অভিবাসী শ্রমিক স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসলে তাকে স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট সব সেবা প্রদানকারী সরকারি অফিসে প্রাধিকার প্রদান করা যেতে পারে। স্মার্ট কার্ড গ্রহণকারীদের জন্য বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে এক্সপ্রেসওয়ে/সার্ভিস পদ্ধতিতে হয়রানি ব্যতীত ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কিলায়ারেন্স এর সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।


সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহী করার জন্য প্রবাসীদের মাঝে প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করতে প্রাইভেট সেক্টরকে সম্পৃৃক্ত করা যেতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করে তাদের স্মার্ট কার্ড প্রদান করা এবং ২ দশমিক ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে।


রেমিটরদের ফ্ল্যাট আকারে প্রণোদনা না দিয় প্রেরিত রেমিটেন্সের তথ্য প্রস্তাবিত কার্ডে সংরক্ষণ করে রেমিটেন্সের পরিমাণের ওপর পয়েন্ট প্রদান করা যেতে পারে। এক কোটি টাকার  বেশি বন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা পরিহার করা, প্রবাসে ১০ হাজার বা এর অধিক পরিমাণ ডলার বিনিয়োগকারী প্রবাসী বাঙালির তথ্য বাংলাদেশকে অবহিত করার বিধান করা যেতে পারে। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাযথভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।


বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক ঘোষিত সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রবাসীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার করা যেতে পারে। অধিক মার্কেটিং এবং প্রচারের মাধ্যমে রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য রেমিটারদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো অবহিত করে তাদের উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। 

উল্লেখ্য, একটি দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে নানা ধরনের সংকট বিরাজ করছে। বাংলাদেশের  বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে। এর পরই বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্স। ব্যাংকিং চ্যানেলে নানা জটিলতা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরত্বে রেমিটেন্সের বড় একটি অংশ তাদের কব্জায়।


এ অবস্থায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নতুন করে কি কি করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে । প্রবাস আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত প্রায় তিন দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকার ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাস আয় এসেছে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।


অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের বড় অংশই  প্রবাস আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে। প্রবাস আয় বৃদ্ধিতে গতি বাড়াতে ইতোপূর্বে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। সম্প্রতি প্রবাসীদের রেমিটেন্সে প্রণোদনা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।


তিনি বলেন, বৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ সুরক্ষিত থাকবে এবং এই অর্থ থেকে সরকারি প্রণোদনাসহ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যমের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি মুনাফা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, যারা বৈধ পথে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পাঠাবেন, তাদের জন্য ‘রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা থেকে ৩ শতাংশ করা হবে বলে আশা করছি।


শেয়ার করুন