সচিবদের জন্য নির্ধারিত ফ্ল্যাটে থাকছেন অতিরিক্ত সচিবেরা। একজন-দুজন নন, ৪৭ জন। অর্থাৎ সচিব নিবাসের ১১৪টি ফ্ল্যাটের প্রায় অর্ধেকের বাসিন্দা এখন অতিরিক্ত সচিবেরা। অথচ সরকারি আবাসন বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী গ্রেড-১ কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত বাসা অতিরিক্ত সচিবদের নামে বরাদ্দের সুযোগ নেই।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, রাজধানীর ইস্কাটনে ১৫২ কাঠা জমিতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সচিব, সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সরকারি আবাসনের জন্য তিনটি ভবনে ১১৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অভিজাত ও সুসজ্জিত ফ্ল্যাটগুলোর প্রতিটির গড় আয়তন ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুট। ১৬১টি গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা থাকা সচিব নিবাস নামের এই কমপ্লেক্সে রয়েছে সুইমিংপুল, বেবি পুল, শরীরচর্চা কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, গাড়ি ধোয়ার ব্যবস্থা। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধনের পর সচিবদের জন্য নির্ধারিত ফ্ল্যাটগুলো ধীরে ধীরে প্রভাবশালী অতিরিক্ত সচিবেরাও বরাদ্দ নেন। বর্তমানে ৪৭টি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন অতিরিক্ত সচিবেরা। প্রশাসনে ৩৮০ জন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন। এসব কর্মকর্তার একটা বড় অংশের রাজউক এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে ফ্ল্যাট রয়েছে।
সূত্র জানায়, সচিব নিবাসের ফ্ল্যাটে বসবাস করা অতিরিক্ত সচিবেরা হলেন ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান (পরিকল্পনা কমিশন), লুৎফুন নাহার বেগম (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়), সালেহ আহমেদ মোজাফফর (স্থানীয় সরকার বিভাগ), তাহমিনা আখতার (বিএমআই), লায়লা জেসমিন (নৌপরিবহন), মো. জাহাঙ্গীর আলম (পররাষ্ট্র), মো. অলিউল্লাহ (মুক্তিযুদ্ধ), মোহাম্মদ আবুল কালাম (বস্ত্র ও পাট), শোয়েবুল আলম (যৌথ মূলধনি কোম্পানির নিবন্ধক), মো. তাজুল ইসলাম (যুব ও ক্রীড়া), পারভীন আক্তার (জাতীয় সংসদ সচিবালয়), সৈয়দ মামুনুল আলম (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত), ড. মো. নজরুল আনোয়ার (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ), খন্দকার রাকিবুর রহমান (ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ), ড. ওয়াহিদা আক্তার (বিয়াম ফাউন্ডেশন), সিদ্দিকা আক্তার (নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর), শহিদুল আলম (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ), মো. আজিজুর রহমান (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক), ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন মাহমুদ (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ), মো. রুহুল আমিন (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), যাহিদা খানম (ভূমি সংস্কার বোর্ড), মো. আমিনুল ইসলাম (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়), সালমা আক্তার জাহান (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়), মো. মোস্তাফিজুর রহমান (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ), মো. নাসির উদ্দিন (কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর), প্রদীপ রঞ্জন (সুরক্ষা সেবা বিভাগ), মো. খায়রুল আলম সেখ (সুরক্ষা সেবা বিভাগ), মাহবুবুর রহমান (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো), ড. মো. আব্দুর রৌফ (কৃষি মন্ত্রণালয়), মো. মামুন-আল-রশীদ (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ), এস এম আলম (শিল্প মন্ত্রণালয়), মো. জাহিদুল ইসলাম (অর্থ মন্ত্রণালয়), হামিদুর রহমান (প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান), মো. আমিনুল ইসলাম (সমবায় অধিদপ্তর), খোরশেদা ইয়াসমিন (জনপ্রশাসন), শেখ রফিকুল ইসলাম (মহিলা ও শিশু), মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক (জননিরাপত্তা), সঞ্জয় কুমার চৌধুরী (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর), মো. মোছা. মাকছুদা খাতুন (বিদ্যুৎ বিভাগ), মো. ইয়াসিন (রেলপথ), মো. আতিকুল হক (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন), মো. খায়রুল আলম (প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান), মো. রফিকুল ইসলাম (যুব ও ক্রীড়া), মো. আরিফুর রহমান অপু (কৃষি), ফারহিনা আহমেদ (অর্থ বিভাগ), মো. শরিফুল ইসলাম (সমাজকল্যাণ) এবং মো. ইউসুফ আলী (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সচিব নিবাস উদ্বোধনের সময় সচিবদের ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেশ কয়েকজন সচিব মিন্টো রোড, গুলশান ও ধানমন্ডিতে বড় বাংলোতে বাস করায় সচিব নিবাসে আসতে চাননি। ফ্ল্যাট খালি থাকার সুযোগে অতিরিক্ত সচিবেরা চাপ দিয়ে বরাদ্দ নিয়েছেন। বরাদ্দ নেওয়ার পর তাঁদের কয়েকজন সচিব হয়েছেন।
জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সচিবদের জন্য চাহিদার চেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়। তাই খালি না রেখে অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে যাঁরা সিনিয়র, তাঁদের দেওয়া হয়। আগের সচিবের (শহীদ উল্লা খন্দকার) সময়ে মূলত অতিরিক্ত সচিবেরা বরাদ্দ নিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।