২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৪১:২৭ অপরাহ্ন
নয়াপল্টন নিয়ে ফের উত্তেজনার আশঙ্কা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২৩
নয়াপল্টন নিয়ে ফের উত্তেজনার আশঙ্কা

পুলিশ এখনো অনুমতি না দিলেও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। নয়াপল্টনকে স্থান ধরে সার্বিক প্রস্তুতি চালানোর কথা জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তবে গতকাল বুধবারও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অনুমতি নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বলায় দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তাও রয়েছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকেন্দ্রিক উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কাও করছেন অনেকে।


একই দিনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সমমনা দল ও জোট। জামায়াতে ইসলামীও একই দিন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। ২৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।


একই দিনে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপি ও সমমনাদের সমাবেশ নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সমাবেশের স্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা এই উদ্বেগ আরও বাড়াবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক নেতারা।


বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চান। এ নিয়েই সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নয়াপল্টনের বিকল্প তাঁরা ভাবছেন না। তাঁরা বিপুল জনসমাগম ঘটাতে চান। তবে মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘাত এড়াতেও তাঁরা সতর্ক। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে ১৮ অক্টোবরের জনসমাবেশ থেকে ২৮ তারিখের মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।


বিএনপির নেতারা বলছেন, মহাসমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে সচিবালয় ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি। তবে কর্মসূচি কী হবে, তা ঠিক হবে সরকারের আচরণ দেখে। আচরণ কঠোর হলে রেল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণাও আসতে পারে। মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। অনেক নেতা-কর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন। তাঁরা নিজেদের মতো নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিচ্ছেন।


বিএনপি বলেছে, নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে এরই মধ্যে ডিএমপিকে অবহিত করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেখানে অনুমতি দেওয়া হবে, সেখানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে।’


তবে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে, ডিএমপি কমিশনার নিশ্চয়ই তাদের অনুমতি দেবেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে রাজধানীর প্রবেশপথ বন্ধ করা হবে না, কোনো বাধাও দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে ঢাকায় কোনো সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।


গতকাল রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা সমাবেশ করব। যেখানে (নয়াপল্টন) বসার কথা, সেখানে না বসলে সারা ঢাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ব। যার যা আছে, তা নিয়ে বসে পড়ব।’ তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিতর্ক রাজনীতিবিদদের মধ্যে থাকতে দিন।’


গয়েশ্বরের ওই বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল নিজেদের এক সভায় বলেছেন, ‘গয়েশ্বর বলেছে, অনুমতি না দিলে অলিগলি দখল করবে। অলিগলি দখল করলে নাকি সবার দরজা খুলে যাবে গয়েশ্বর বাবুকে স্বাগত জানাতে। মনে নাই, আপনি কোরাল মাছের ঝোল খেয়ে আসছেন? এবার আপনার কপাল খারাপ। আমরা আটঘাট বেঁধে নেমেছি। অলিগলিতেও পালাবার পথ পাবেন না।’


২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা। এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে দলগুলোর বৈঠকে এ বিষয়ে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও শরিক দলের একাধিক নেতা বলেন, এক দফার আন্দোলন এখন সফলতার দিকে যাচ্ছে। এই পর্যায়ে এসে আর ভুল করার সুযোগ নেই। ২৮ অক্টোবর কোনো সংঘাতের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না, যাতে করে সরকার ফায়দা নিতে পারে। এ ব্যাপারে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


এদিকে গতকাল রাজধানীতে ২৩ জনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির অন্তত ৪৫ নেতা-কর্মীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। খুলনার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ জন ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।


মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মহাসমাবেশ সফল করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকার দিকে আসছেন। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে র‍্যাবের চৌকি বসিয়ে তল্লাশির নামে নানাভাবে তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের বাড়িসহ আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, গ্রেপ্তার এবং পরিবারের সদস্যদের নাজেহাল করা হচ্ছে।’


রিজভী বলেন, গত ২৮ জুলাই থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ৩ হাজার ৬২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় মামলা করা হয়েছে ৪০০টি, আসামি করা হয়েছে ২৬ হাজার ৭৮০ জনকে।


বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ মহাসড়কগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনা চিহ্নিত করতে পুলিশের গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করছেন।


শেয়ার করুন