২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:৪৭:৩৪ পূর্বাহ্ন
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৩
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসনের এমন অবস্থান স্পষ্ট করা হয়। 


বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বার্মার অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।’ 


রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম চর্চা, ধ্যান-ধারণা ও সংস্থান বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র উন্মুখ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গারা তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী এবং নিজ পরিবারের অর্থনৈতিক কল্যাণে কীভাবে অবদান রাখতে পারে তা চিহ্নিত করার গুরুত্ব বাড়ছে। এর মাঝে রয়েছে আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে আরো বড় অবদান রাখার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সামাজিক সংস্থাগুলোতে তাদের অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা।’ 


মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার ছয় বছর পূর্ণ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর বার্মা সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যা অভিযানের ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ (২৫ আগস্ট)। সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বহনযোগ্য অল্প কিছু জিনিস নিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল শাসকদের এ গণহত্যা। বাংলাদেশের জনগণ সহানুভূতি এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুর প্রতি আতিথেয়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের জনগণ। আমরা এ উদারতার প্রশংসা করি।’ 


আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের এ প্রচেষ্টায় সমর্থন জানিয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আমেরিকার জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এ অঞ্চলজুড়ে উদ্ভূত মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ২১০ কোটি ডলারেরও বেশি অবদান রেখেছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ১৭০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের এ সমর্থন অবিচল রয়েছে।’ 


যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ‘বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খুঁজে ফেরা রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল ধরে ভুগছে। মর্যাদার সঙ্গে, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়া, সপরিবারে শান্তিতে বাস করা এবং অর্থ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। সেই লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের সমর্থনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার, নৃশংস অপরাধীদের জন্য জবাবদিহিতা ও সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ 


জাতিগত নিধনযজ্ঞের সাক্ষী এ জনগোষ্ঠীর মানুষের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ। তাই আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, পুনর্বাসনের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সর্বাঙ্গীণ সমাধানে অবদান রাখছি। আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখা অন্য দেশগুলোর উদারতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি, ঐতিহ্যগতভাবে পুনর্বাসন দেয়া দেশগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে৷। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এ অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়েছে।’ 


বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ সংকট এরই মধ্যে সপ্তম বছরে পদার্পণ করছে। ফলে সমগ্র অঞ্চলজুড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্প খুঁজতে আমাদের অবিচল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’


শেয়ার করুন