মশা জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি এবং ডেঙ্গু হলো কীটপতঙ্গ দ্বারা ছড়ানো একটি বড় প্রাণঘাতী রোগ। আসলে ডেঙ্গু এতটাই মারাত্মক যে, ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া একজন ব্যক্তির আরও কিছু সময়ের জন্য যত্ন নেওয়া উচিত। এটি স্বাভাবিক ডেঙ্গু জ্বর, ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর এবং ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এ ধরনের লোকের হারানো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্রাম এবং সঠিক খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া তাদের থেকে অন্যদের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা নিচে দেওয়া হলো-
* ফল এবং শাকসবজি
ডেঙ্গু এবং সংশ্লিষ্ট অবস্থা থেকে সেরে উঠেছেন এমন রোগীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সহজে হজম হয় এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত। প্রচুর পরিমাণে ফল, ফলের রস এবং শাকসবজি খেতে হবে। কারণ এগুলো ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। আরেকটি ভালো খাওয়ার উপযোগী ফল হলো পেঁপে। এর পাতাও উপকারী।
এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’ থাকায় পেঁপে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ায়। পানি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এটি গ্রহণের পরিমাণ কমপক্ষে দুই লিটার হতে হবে, যা দিনে প্রায় আট গ্লাস হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করা যায়। জ্বর, বমি এবং ডায়রিয়ার মতো অবস্থাগুলো ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) খাওয়া যেতে পারে।
যদি কিছু ওষুধ লিখে দেওয়া হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। যাই হোক, যেসব রোগী হেমোরেজিক জ্বর থেকে সেরে উঠেছেন তাদের মনে রাখা উচিত কিছু ওষুধ যেমন NSAID ব্যথানাশক এবং অ্যাসপিরিন অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটাতে পারে।
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
ডেঙ্গু থেকে বেঁচে যাওয়া, বিশেষ করে যারা আইসিইউ-তে (নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট) সময় কাটিয়েছেন তাদের স্বাভাবিক সময়সূচি পুনরায় শুরু করার আগে বাড়িতে কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহের বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
এ সময়ে ভ্রমণ এবং কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। দিনে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমান। যাই হোক, একজনকে সব সময় বিছানায় সীমাবদ্ধ থাকার দরকার নেই, তবে রুমে হাঁটার মতো হালকা শারীরিক ব্যায়ামে নিযুক্ত হতে পারে। প্রসঙ্গত, এ ধরনের কাজগুলো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
* প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
মশার উপদ্রব রোধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিন। এটির বাহক থেকে অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করবে।
একইভাবে, রোগ থেকে সেরে উঠেছে এমন ব্যক্তির মধ্যেও পুনরাবৃত্তি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। অধিকন্তু, আগে স্বাভাবিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরে যদি ভাইরাসটি আবার প্রবেশ করে, তবে তার ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর হতে পারে।
মশা তাড়াতে চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। একইভাবে, মশারি, তাড়ানোর ওষুধ এবং শরীর ঢেকে রাখার পোশাক যেমন ফুলহাতা শার্ট আপনাকে কামড় থেকে বাঁচাতে পারে।
ডেঙ্গুজ্বরের সাত সতর্কীকরণ লক্ষণ
▶ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা।
▶ ক্রমাগত বমি।
▶ শরীরে পানি আসা।
▶ মাড়ি, নাক থেকে রক্তপাত হলে বা বমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে।
▶ অসম্ভব দুর্বলতা বা অস্থিরতা।
▶ যকৃৎ বা লিভার বড় হওয়া।
▶ প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি হেমাটোক্রিট বা এইচসিটি (লোহিত কণিকার সঙ্গে রক্তের পরিমাণের অনুপাত) বেড়ে যাওয়া।
একজন ডেঙ্গু রোগীকে ৭-১২ দিন পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সাধারণত মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ ২-৪ দিনের মধ্যে ডেভেলপ করে। সাত দিনের মধ্যে মারাত্মক রোগের উপসর্গ দেখা না দিলে ধরে নেওয়া যায়, রোগী কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) টেস্ট করতে হবে।
লেখক : মেডিকেল এডুকেটর অ্যান্ড জিপি এক্সামিনার, সিনিয়র জিপি, ওয়াল্টার্স মেডিকেল সেন্টার, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া।