সরকারি বরাদ্দের টাকায় পিজি সমিতির সদস্যদের নিজের বাড়ির আঙিনায় দেশি মুরগি ও ছাগল পালনের ঘর তৈরি করার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডিজাইনমাফিক ঘর করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ব্যাংক হিসাব থেকে সদস্যদের সব টাকা তুলে দিতে বাধ্য করেন। এখন নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা ঘর নিতে তাঁদের (সদস্যদের) ওপর ওই কর্মকর্তা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ছাগল পালনকারীদের ৩০টি ঘরের নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) কর্তৃক উপজেলা পর্যায়ে গঠিত প্রোডিউসার গ্রুপের (পিজি) সদস্যদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট সাপোর্টের আওতায় মুরগি ও ছাগলের পরিবেশবান্ধব শেড (ঘর) নির্মাণের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় পৌরসভার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়া পিজি সমিতি ও জানিপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাছুয়াঘাটা এবং ওসমানপুর ইউনিয়নে হিজলাবট পিজি সমিতির ৯০ জন সদস্যকে সরকারের এলডিডিপি প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৬০ জনকে দেশি মুরগি পালনের ঘর তৈরির জন্য প্রত্যেককে ২০ হাজার ও দেশি ছাগল পালনের ঘর তৈরির জন্য ৩০ জনকে ২৫ হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য সুবিধাভোগীদের নিজ নামের ব্যাংক হিসাবে সরকারি বরাদ্দের টাকা দেওয়া হয়।
মাঠপাড়া পিজি সমিতির ভুক্তভোগী সদস্যদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহীনা বেগম সদস্যদের নামে বরাদ্দের সব টাকা হাতিয়ে নেন। ব্যাংক হিসাবে সরকারি বরাদ্দের টাকা যাওয়ার পরপরই তিনি টাকা তুলে দেওয়ার জন্য সদস্যদের ওপর চাপ দিতে থাকেন। সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সাত-আটজনের ছোট ছোট দল করে ব্যাংকে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যাংক হিসাব থেকে বরাদ্দের সমুদয় টাকা নিজের হাতে জমা নেন ওই কর্মকর্তা। এরপর কথিত ঠিকাদার নিয়োগ দেন। তার মাধ্যমে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সদস্যদের বাড়িতে ঘর তোলা চলছে।
খোকসা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডে মাঠপাড়ায় সরেজমিন গিয়ে সদস্যদের বাড়িতে ঘর তৈরি করতে দেখা গেছে। অনেক বাড়িতে কাঠ ও সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে ঘরের ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে। সিমেন্টের অধিকাংশ খুঁটি ভ্যানে নেওয়ার সময় ভেঙে গেছে। নির্মাণ শ্রমিকেরা জানান, আবির নামের এক ব্যক্তি ঘরের ঠিকাদারি পেয়েছেন। ঠিকাদারকে তাঁরা দেখেননি, চেনেনও না।
মাঠপাড়া পিজি সমিতির সভাপতি অঞ্জনা খাতুন জানান, সমিতির সদস্যদের নামের ব্যাংক হিসাবে বরাদ্দের টাকা জমা হয়। সরকারি নকশা অনুযায়ী সদস্যরা নিজে ঘর তৈরি করে নেবেন বলে সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহীনা বেগম সদস্যদের দিয়ে টাকা তুলে নিজের হাতে নিয়েছেন। তাঁর সমিতির ৩০ জন সদস্য এ প্রকল্পের বরাদ্দ পেয়েছেন।
তিনি আরও জানান, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাঁর নিজের ক্ষমতাবলে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন। ঘরগুলো নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করছেন। প্রতিটি ঘরে ১৪ ফুট আর্দ্রতা রোধক ইনসুলেশন পেপার দেওয়ার কথা ছিল। যার মূল্য ধরা আছে ৩ হাজার টাকা। কিন্তু ১৪০ টাকা মূল্যের ইনসুলেশন পেপার ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে ৫ সিএফটি কাঠ ধরা আছে কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে ২ সিএফটি কাঠ। তাও আবার নিম্নমানের। সিমেন্টের খুঁটির ভেতরে রডের পরিবর্তে জিআই তার দেওয়া। ভ্যানে আনার সময়েই একাধিক খুঁটি ভেঙে গেছে। তাঁরা এসব অভিযোগ নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে কয়েক দফায় গিয়েছিলেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে সমিতিই বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহীনা বেগম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘নিয়মমাফিক কাজ করানো হচ্ছে। এ ছাড়া আবিরকে ঘর তৈরির ঠিকাদারি দেওয়া হয়নি। সে পাশের কুমারখালী উপজেলায় এই প্রকল্পের ঘর তৈরি করেছে। তার অভিজ্ঞতা আছে তাই তাকে দিয়ে ঘর তৈরি করানো হচ্ছে। সদস্যদের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই কর্মকর্তা।’
প্রকল্পে নিয়োজিত এক্সটেনশন অফিসার আবদুল আলীম বলেন, ‘কোনো সদস্য আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। সব কথা মোবাইল ফোনে বলা যায় না। আপনি অফিসে আসেন কথা হবে।’ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আল মামুন হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘এমনিতেই এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’