০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
এমপি ফারুক চৌধুরীর সভা তাই ক্লাস বন্ধ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২৩
এমপি ফারুক চৌধুরীর সভা তাই ক্লাস বন্ধ

এমপি ফারুক চৌধুরীর সভাকে কেন্দ্র করে ইউপি র উচ্চ বিদ্যালয় ও  প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল থেকে  রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন আ”লীগের বর্ধিত সভার নামে হয়েছে উপকার ভোগী ও শিক্ষক কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা।


ইউপির সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী দের লালপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সভার  ঘটনা ঘটে । এতে করে জাতীয় নির্বাচনের আগেও বিতর্কের জন্ম দিতেই আছেন। ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরাই যেন সভার মুল কর্মী হয়ে পড়েছেন।


সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন (ইউপির)  লালপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝখানে রয়েছে মাঠ। মাঠের দক্ষিণে সভার মঞ্চ। মাঠের পশ্চিম ও পশ্চিম উত্তরে লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়। পূর্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়। মুল রাস্তার উত্তরে হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং মঞ্চ থেকে কয়েক হাত দূরে মডেল কলেজ।

লালপুর স্কুলের প্রতিটি ক্লাসে বই ব্যাগ রেখে শিক্ষার্থীরা সভায় বসে আছে। সপ্তম, ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর বেশকিছু শিক্ষার্থীরা হঠাৎ সভা থেকে নিজ ক্লাসে আসেন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় ক্লাস হয়েছে কিনা তারা বলেন, মাত্র একটি ক্লাস হয়েছে, আর কোন ক্লাস হয়নি, সবাইকে প্রধান শিক্ষক শরিফুল ও প্রাইভেট শিক্ষক সাফিউল স্যার সভায় যেতে  বলেছেন। এজন্য আমাদের ক্লাস বন্ধ ছিল।

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরাও একই কথা বলেন। ইউপি এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক দের সভায় দেখা যায়। তারা বলেন ইউপি এলাকার যতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সবগুলোর শিক্ষকদের আসতে বাধ্য করা হয়েছে। তাহলে কি স্কুল বন্ধ ছিল জানতে চাইলে তারা বলেন শিক্ষকরা সভায় আসলে ক্লাস কে নিবে বলে তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সভা শেষ হয় বিকেল তিন টার দিকে। সভা শেষে খাবার নিয়ে সবাই চলে যান। কিন্তু হাফিজিয়া মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুরা তখনও খাবার দেয়া হয়নি। পরে অবশ্য দেয়া হয়।

জানা গেছে, তালন্দ ইউনিয়ন আ”লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউপি আ”লীগ সভাপতি মেম্বার আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক মেম্বার আবুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমপি ফারুক চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন,  উপজেলা আ”লীগ সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার, কৃষক লীগ সভাপতি প্রদান শিক্ষক রাম কমল সাহা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার, ভাইস চেয়ারম্যান কৃষকলীগ সম্পাদক আবু বাক্কার সিদ্দিক, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের ইসলাম, ইউপি যুবলীগের সভাপতি মুকলেসুর রহমান সম্পাদক মইফুল ইসলাম প্রমুখ।

একাধিক শিক্ষক রা বলেন ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু  ইউপি সভাপতি আব্দুল করিম ও সম্পাদক আবুল হাসানের কঠোর নির্দেশ সভায় যেতে হবে।

দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, বর্ধিত সভায় দলীয় নেতাকর্মীরা থাকবে। এখানে শিক্ষক কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও উপকার ভোগীরা কেন থাকবে। এসব নেতৃত্বের দূর্বলতা। কারন যাদের হাতে নেতৃত্ব তাদের ডাকে কর্মীরা আসবেনা। এসব করে এমপিকে বিতর্কিত করা ছাড়া কিছুই না।

লালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল বলেন সকালে ক্লাস হয়েছে। এমপি আসার পর আর ক্লাস হয়নি। লালপুর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে ক্লাস হয়েছে এমপি আসার পর আর হয়নি। মাত্র একটি ক্লাস হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এসব নিয়ে কিছু বলার নাই।

চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। সভাপতি ও সম্পাদক বলতে পারবেন। সভাপতি করিম ও সম্পাদক আবুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, স্কুল মাঠে সভা এজন্য ক্লাস বন্ধ। সরকারি দলের সভা এসব একটু আদটু হবেই।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমানের মোবাইল বিজি পেলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিরা বেগম বলেন, স্কুল বা ক্লাস বন্ধ করে সভা করা কোন সুযোগ নেই। আমি এবিষয়ে জানিনা খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একই দিন বিকেলে সরনজাই স্কুল মাঠে ইউপি আ”লীগ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভাকে কেন্দ্র করে সরনজাই স্কুলের ভিতরে সকাল থেকে চলে রান্নার কাজ এবং সভাস্থলে স্কুল চলাকালীন সময়ে চলে ডিজে ব্যান্ড পার্টি।


শেয়ার করুন