৩১ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ০৯:৩২:৩১ অপরাহ্ন
শুকরের লিভার মানবদেহে প্রতিস্থাপনে সফল চীনা চিকিৎসকরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৫
শুকরের লিভার মানবদেহে প্রতিস্থাপনে সফল চীনা চিকিৎসকরা

 চীনা চিকিৎসকরা প্রথমবারের মতো একটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত শুকরের লিভার মস্তিষ্ক-মৃত (ব্রেন-ডেড) এক মানবদেহে প্রতিস্থাপনে সফল হয়েছেন। বুধবার (২৬ মার্চ) তারা এই সাফল্যের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, এটি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং বিশ্বজুড়ে লিভার দাতার ঘাটতির সমাধানে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।  


অঙ্গ দানের জন্য শুকরকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন জীবিত রোগীর শরীরে শুকরের কিডনি বা হৃদযন্ত্র সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে লিভার প্রতিস্থাপন বেশি চ্যালেঞ্জিং, এবং এটি এর আগে কোনো মানবদেহে পরীক্ষা করা হয়নি।  


বিশ্বজুড়ে লিভার প্রতিস্থাপনের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই গবেষকরা আশা করছেন, জিন-সম্পাদিত শুকরের লিভার অন্তত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য একটি সাময়িক সমাধান হতে পারে।  


চীনের শিয়ানের চতুর্থ সামরিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা এই গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জনের ঘোষণা দেন। এই গবেষণা ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।  


প্রথম শুকরের লিভার মানবদেহে প্রতিস্থাপন


গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০ মার্চ ২০২৪ সালে চীনের এক হাসপাতালে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির শুকরের লিভার এক ব্রেন-ডেড প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। লিভারটি ছয়টি জিন সম্পাদনার মাধ্যমে মানবদেহের উপযোগী করা হয়েছিল।  


এই ট্রায়াল ১০ দিন পর রোগীর পরিবারের অনুরোধে বন্ধ করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তারা কঠোর নৈতিক নির্দেশনা অনুসরণ করেছেন।  


‘ব্রিজ অর্গান’ হিসেবে ব্যবহার


গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীর আসল লিভার তার দেহে বহাল ছিল। শুকরের লিভারকে ব্রিজ অর্গান হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহে বিদ্যমান লিভারকে সহায়তা করতে পারে এবং রোগীদের মানব লিভার দানের জন্য অপেক্ষা করার সুযোগ করে দিতে পারে।  


১০ দিন ধরে চিকিৎসকরা লিভারের রক্তপ্রবাহ, পিত্ত উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।  


গবেষণার সহ-লেখক এবং শিয়ান হাসপাতালের চিকিৎসক লিন ওয়াং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুকরের লিভার অত্যন্ত ভালোভাবে কাজ করেছে, এটি স্বাভাবিকভাবে পিত্ত নিঃসরণ করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন অ্যালবুমিন উৎপাদন করেছে। এটি লিভার প্রতিস্থাপনে ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। 


সতর্কতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা


বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণাকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন, তবে তারা সতর্ক করেছেন যে এটি এখনই মানব লিভারের পরিবর্তে সম্পূর্ণ কার্যকর বিকল্প হতে পারে না।  


অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ফ্রেন্ড গবেষণাটি ‘গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি বলেন, শুকরের লিভার প্রতিস্থাপন এখনও মানবদেহে সম্পূর্ণ কার্যকর প্রতিস্থাপনের বিকল্প নয়। তবে এটি ভবিষ্যতে লিভার বিকল হওয়া রোগীদের জন্য একটি সমর্থনমূলক সমাধান দিতে পারে। 


চীনা গবেষকরা জানান, ভবিষ্যতে তারা জীবিত মানুষের শরীরে জিনগতভাবে পরিবর্তিত শুকরের লিভার প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করছেন।  


গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক মস্তিষ্ক-মৃত রোগীর শরীরে শুকরের লিভার সংযুক্ত করেছিলেন, তবে সেটি শরীরের ভেতরে প্রতিস্থাপন করা হয়নি, বরং বাইরে সংযুক্ত রাখা হয়েছিল।  


যুক্তরাষ্ট্রে শুকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপিত দুই রোগী শেষ পর্যন্ত মারা গেলেও, টোয়ানা লুনি নামের ৫৩ বছর বয়সি এক নারী ২৫ নভেম্বর ২০২৪ সালে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।  


চিকিৎসক লিন ওয়াং বলেন, আমরা অকপটে স্বীকার করি, এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের গবেষণা ও অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি।  


এই সাফল্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।


শেয়ার করুন