রাজশাহীর তানোরে এসএসসি ফরম পুরণে বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু অতিরিক্ত টাকা না যারা টেস্ট পরিক্ষায় ফেল করেছে তাদের নিকট থেকে এক বিষয়ে আরো অতিরিক্ত ৮০০/১০০০ টাকা করেও নিচ্ছেন শিক্ষকরা বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন। ফলে ফরম পুরণে শিক্ষকদের এমন বেপরোয়া বাণিজ্যের কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল।
জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর থেকে এসএসসি ও সমমান পরিক্ষার ফরম পুরণ শুরু হয়েছে। ফরম পুরনের জন্য বোর্ড নির্ধারিত ফি বিজ্ঞান বিভাগে ২১৪০ টাকা ও মানবিক এবং ব্যবসয়ী বিভাগের জন্য ২০২০ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত ফিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান ফরম পুরুন করছে না। প্রতিষ্ঠান গুলো বিভিন্ন অজুহাতে ঊর্ধ্বে ২৫০০ টাকা করে নিম্মে ২৪০০ টাকা করে আদায় করছেন।
সরনজাই, মোহর, শুকদেবপুর ও লালপুর স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২৫০০ টাকা ও মানবিক বিভাগে ২৪০০ ও ২৩৫০ টাকা করে আদায় করেছেন। আবার যে সব পরিক্ষার্থীরা টেস্ট পরিক্ষায় এক বিষয়ে ফেল হলে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে ফরম পুরন করতে দিচ্ছেন।
সরনজাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি নিয়ে ফরম পুরণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ছাত্র বলেছে তাকে ধরে নিয়ে আসতে হবে। যত খুশি লিখ পত্রিকায় আমার কিছুই হবেনা। টেস্ট পরিক্ষায় যারা ফেল করেছিল বিষয় প্রতি ৮০০/১০০০ টাকা করে নিয়ে ফরম পুরন হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে সাব জানিয়ে দেন আমি এসব বলতে বাধ্য না।
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান ফরম পুরুন করেননি। ২৫০০ টাকা ২৪০০ টাকা না হলে ২৩০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। আবার সারা বছর স্কুল করিয়ে টেস্ট পরিক্ষায় অনেকে ফেল করেছেন। কেউ এক বিষয়ে আবার কেউ দু বিষয়ে তাদের কাছ থেকে এক বিষয়ে নিম্মে ৮০০ টাকা ঊর্ধ্বে ১০০০ টাকা করে নিয়ে ফরম পুরন করতে দিয়েছে। শিক্ষক রা তো শিক্ষা কে আর শিক্ষার জায়গায় রাখেননি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বানিজ্য আর বানিজ্য শুরু করেছেন। টেস্ট পরিক্ষায় কেন শিক্ষার্থীরা ফেল করবেন।
ফেল করলে ফরম পুরুন করতে দিবে না। নচেৎ বাড়তি টাকার বিনিময়ে ফরম পুরুন করতে হচ্ছে। এটাও এক ধরনের বানিজ্য। উপজেলায় যতগুলো স্কুল মাদ্রাসা রয়েছে সবগুলোতে সরেজমিনে তদন্ত করলেই সব অনিয়ম অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আমরা যাব কোথায় প্রাইভেট কোচিং না হলে হয়না। আবার পরিক্ষার্থীদের ফরম পুরনের পর বাকি আড়াই তিন মাস স্কুলে প্রিপারেশনের জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। যেখানে সরকার বছরের প্রথম দিনে বই দিচ্ছে বিনা মূল্যে। যাতে করে পড়া লিখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু সে বই কতটুকু কাজে লাগে। কারন গাইড ছাড়া কিছুই হয়না।
শিক্ষকদের চাহিদামত গাইড কিনতে হয়। শিক্ষা উপকরণের দাম দ্বিগুন। এউপজেলার জনসাধারন কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখনো মাঠে ধান কাটা শুরু হয়নি। অনেকে এনজিও থেকে ঋন বা সুদের উপর টাকা নিয়ে ফরম পুরন করেছেন।
লালপুর স্কুলের কয়েকজন পরিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে ২৫০০ টাকা ও মানবিক বিভাগে ২৪০০ টাকা করে নিয়েছেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে একটাকাও বেশি নেয়া হয়নি। আপনার শিক্ষার্থীরা বলেছে ২৪০০/২৫০০ টাকা নেয়া হয়েছে এবং টেস্ট পরিক্ষায় যারা ফেল করেছে তাদেরকে বিষয় প্রতি ৮০০/১০০০ টাকা করে নিয়েছেন জানতে তিনি কোন উত্তর দেন নি।
এছাড়াও মাদ্রাসা ও ভোকেশনাল শাখায় নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত টাকা।
মোহর স্কুলের প্রধান রমজান আলী সামান্য পরিমান অতিরিক্ত টাকার নেয়ার কথা শিকার করে বলেন টেস্ট পরিক্ষায় যারা ফেল করেছে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৮০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। তারা এসএসসি পরিক্ষার আগে পুনরায় টেস্ট পরিক্ষার পাশ করলে এসএসসি পরিক্ষা দিতে দেয়া হবে, তানাহলে তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তালন্দ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেন বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২৩৫০ টাকা আর মানবিক বিভাগের জন্য ২২৫০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। আজ বনকেশর থেকে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এসেছিল আমি পকেট থেকে ১০০ টাকা দিয়ে ফরম পুরুন করিয়েছি।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোন সুযোগ নেই। কোন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা নিলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।