পড়াশোনার পাশাপাশি উপস্থাপনা, আবৃত্তি, তরুণদের বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করেন। একাধিক সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। গরিব, অসহায় মানুষদের সাহায্যার্থে কাজ করছেন অনেক বছর ধরে। তিনি সিআরপি নার্সিং কলেজের বিএসসি ইন নার্সিং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহে জাবীন মাহী। পরিবারের সঙ্গে থাকেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে।
শুরুটা ছোটবেলায়
ছোটবেলা থেকে মাহীর পাঠক্রমবহির্ভূত কার্যক্রমের প্রতি ঝোঁক ছিল। বড় হয়ে পড়ছেন নার্সিং বিষয়ে। পড়তে গিয়ে তাঁর মনে হলো, আরও ব্যাপকভাবে মানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব। তাই একদিকে জনসেবামূলক কাজ, অন্যদিকে উপস্থাপনা, আবৃত্তি ইত্যাদিতে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন তিনি। অল্প সময়ে মাহী নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন এসব ক্ষেত্রে।
সংগঠনের প্রাণ
আঁচল ফাউন্ডেশন, মুক্ত তরী, রোটারেক্ট ক্লাব অব নারায়ণগঞ্জ, এগ্রিন ফাউন্ডেশন, মনোসেবা ফাউন্ডেশন, জ্যোতি, ঢাকা আরামবাগ অ্যাঞ্জেলস লিও ক্লাব, সোসাইটি অব বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েট নার্সেস ইত্যাদি ডজনখানেক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মাহী। এর মধ্যে রোটারেক্ট ক্লাব অব নারায়ণগঞ্জ মিডসিটিতে কমিউনিটি সার্ভিস ডিরেক্টর, ঢাকা আরামবাগ অ্যাঞ্জেলস লিও ক্লাবে সিস্টার লিও কো-অর্ডিনেটর, সোসাইটি অব বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েট নার্সেসে প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে তাঁর তৎপরতা সবার নজর কেড়েছে।
কণ্ঠের জাদুকর
কথা বলতে ভালোবাসেন মাহী। নিজ কণ্ঠ তাঁর অতিপ্রিয়। এই কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ করেন হলভর্তি মানুষদের। উপস্থাপনার প্রতি মাহীর আগ্রহ ছোটবেলা থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং করপোরেট ইভেন্ট উপস্থাপনা করেন।
সফল সংগঠক
মাহী সফলভাবে দুটি ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৯ জুলাই ইয়ুথ ক্যারিয়ার ইনস্টিটিউট আয়োজিত ওয়াইসিআই ফ্রিল্যান্স সামিটের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। বর্তমানে মাহী প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় লিডারশিপ টিমের দলপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সফল ব্যক্তির অনুপ্রেরণার গল্প নিয়ে জার্নি অব সাকসেস নামের একটি অনুষ্ঠানের অপারেশন বিভাগের প্রধান তিনি। এ ছাড়া মুক্ত তরী, সোসাইটি অব বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েট নার্সেসসহ বিভিন্ন সংগঠনের মানবিক কাজের সঙ্গেও যুক্ত।
তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের কাজ
মেহে জাবীন ইউসিআইয়ের হয়ে ফ্রি অফলাইন ও অনলাইন সেশনের মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, নেতৃত্ব ও যোগাযোগের দক্ষতা, সমস্যার সমাধান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সৃজনশীলতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন।
পড়াশোনার ক্ষতি হয়নি
নিজে সময় ব্যবস্থাপনায় বেশ দক্ষ বলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন ঠিকমতো। সে কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হয়নি তেমন। পড়াশোনা ও হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্লেসমেন্টের ফাঁকের অবসর সময় তিনি কাজে লাগান বিভিন্নভাবে। এতে মানসিক প্রশান্তি আসে, সময়টাকে সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
তরুণদের প্রতি আহ্বান
শিক্ষার্থী অবস্থায় নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিলে চাকরি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে কম দুর্ভোগে পড়তে হবে বলে মনে করেন মাহী। অথবা এমন দক্ষতা তৈরি করতে হবে যেটা পরে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। তাই মাহী মনে করেন, অবসর সময় নষ্ট না করে তা কাজে লাগানো জরুরি।
একজন বৃক্ষপ্রেমী
এত সব কাজের পাশাপাশি বৃক্ষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা মাহীর। তাঁর বাসায় সবজি ও ফুল মিলিয়ে ৪০টির বেশি প্রজাতির গাছ আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১০০ জনের বেশি মানুষকে বিভিন্ন উপলক্ষে নিজের বাগানে উৎপাদিত গাছ উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন।
সম্মাননা ও পুরস্কার
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও আবৃত্তিতে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন মাহী। এনওয়াইসিসি-২২-এ সেরা সংগঠক হিসেবে পেয়েছেন সম্মাননা। এ ছাড়া বিভিন্ন ইভেন্ট সঞ্চালনা ও সামিট কনভেনর হিসেবে পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার। ভারতের শ্রুতিপুরম নামের একটি সংগঠন থেকে পেয়েছেন কবিতা আবৃত্তিতে পুরস্কার। উচ্চশিক্ষা শেষ করা আর মানুষের কল্যাণে সব কাজ করে যাওয়াই মেহে জাবীনের পরিকল্পনা।