২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৬:৫৭:৫৬ অপরাহ্ন
সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার শুরু
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার শুরু

নির্বাচনী মেজাজে আ.লীগ : সিলেট থেকে প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী, কাজ চলছে ইশতেহার প্রণয়নের 

আগামী সপ্তাহে ঘোষণা হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার আগে চলছে শেষ প্রস্তুতি। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বেশ জোরেসোরেই। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি জনসভা করেছেন। এসব জনসভায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রতিটি জনসভায় সরকারের নেয়া নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে সমর্থন ও নৌকায় ভোট চাইছেন দলীয়প্রধান। সবশেষ গত শনিবার মেট্টোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন শেষে ঢাকার আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। সেই সমাবেশেও নৌকার জন্য ভোট চান তিনি। তফসিলের আগে কক্সবাজার, খুলনা ও নরসিংদীতে জনসভায় অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর তফসিল ঘোষণার পর অতীতের মতো এবারো পবিত্র নগরী সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবেন তিনি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকাসহ সারাদেশেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারা জনগণের কাছে যাচ্ছেন। এমপিরা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও সরকারের উন্নয়ন ভোটারদের কাছে প্রচার করছেন। নিজের ছবি সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও লিফলেট ভোটারদের কাছে বিতরণ করছেন। এসবে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ছবি ওপরে। আর নিচে থাকছে প্রার্থীদের ছবি। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মোংলা পোর্ট, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলি টানেল, ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ৫৬০টা মডেল মসজিদ নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে, ফোর লেন সড়কসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের ছবি শোভা পাচ্ছে তাদের প্রচারণায়।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাও এখন সবাই ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মিসভা, জনসভা করছেন। নিজ নিজ এলাকায় সর্বশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন। মতবিনিময় করছেন সরকারের দেয়া বিভিন্ন উন্নয়নের সুফলভোগীদের সঙ্গে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলে পরবর্তী ৫ বছরে কি কি কাজ করা হবে আওয়ামী লীগ তা ইশতেহারে উল্লেখ করবে। সেজন্য নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটি গঠন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এরই মধ্যে ইশতেহার উপকমিটি ২ দফা বৈঠক করেছে। ইশতেহারে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছে কমিটি। এবারের ইশতেহারে মূল শিরোনাম থাকছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণ।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা কয়েকটি ছোট ছোট দল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি চলছে। উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন, নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিরোধীদের জবাব দিতে প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। এসব সমাবেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা প্রতিহতেরও ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল-স্লোগানে জমজমাট রাখছেন নিজ নিজ এলাকা।

রাজধানীর প্রতিটি এলাকাতেও নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলাতেও পুরোদমে মাঠে আছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই তারা মিছিল ও সমাবেশ করছেন। এমপিরা নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ করছেন। তারাও শেষ মুহূর্তের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করছেন।

এদিকে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তৃণমূলের কোন্দল মেটানো। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ আগস্ট গণভবনে সারাদেশের নেতাকর্মীদের ডেকেছিলেন। সারাদেশ থেকে আসা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রেখেছেন। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছিল তৃণমূলের ভয়াবহ চিত্রের কথা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কথা শুনেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যে সেসব কোন্দল দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন তৃণমূলকে। তিনি তার বক্তব্যে বলেছিলেন- আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। দেশকে পিছিয়ে দেবে। তাই সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। সেদিন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রæতি দেন। এরপর থেকেই অনেকটা কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে আছেন নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের কোন্দলে যেন আওয়ামী লীগকে পরাজয় বরণ করতে না হয়, সেজন্য প্রতিটি জনসভা ও মিটিংয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন তিনি। বলেন, নমিনেশনের বিষয়ে আমি যে সিদ্ধান্ত দেব, তা মানতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, এই কথা মনে করে কেউ যদি নিজ দলের প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে অর্থাৎ এই মনোভাব যদি থাকে, যে একটি আসন না জিতলে কি হবে, আওয়ামী লীগ সরকার তো গঠন করবে। এই চিন্তা সর্বনাশ ডেকে নিয়ে আসবে। কাজেই এ ধরনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।

আগামী ১১ তারিখ কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তিনি। আরো কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পও উদ্বোধন করবেন সরকারপ্রধান। এরপর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখেবেন। ১২ নভেম্বর নরসিংদীতে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এরপর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। ১৩ নভেম্বর খুলনায় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। প্রতিটি জনসভাতেই তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন।

এর আগে ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করে জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে পদ্মা রেলওয়ে সেতু উদ্বোধন করে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জনসভা, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, যশোর, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করে জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। প্রতিটি জনসভায় ব্যাপক লোক সমাগম করা হয়। এসব জনসভায় ছিল নির্বাচনী আমেজ।

এদিকে গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতের মতোই এবারো সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা হবে। সেই জনসভা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনীর প্রচারণা শুরু হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আমরা নির্বাচনের পক্ষে। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে হবে। নির্বাচনের জন্য আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছি। নির্বাচন যথাসময়েই হবে। নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আমরা সবাই জনগনের কাছে যাচ্ছি। সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরছি। জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছি। জনগণ আমাদের ডাকে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। সতরাং আওয়ামী লীগ শুধু নয়; বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণ- সবার মধ্যেই নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য শাজাহান খান ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। দেশের জন্য, জনগনের জন্য কাজ করে। তাই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তারা উন্মুখ হয়ে থাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সব জায়গায় আমাদের প্রস্তুতি আছে। নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। সরকারের উন্নয়ন জনগণের কাছে তুলে ধরছেন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আসছে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। আমাদের পার্টির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড ৩শ আসনেই প্রার্থী দেবেন। ইনশাল্লাহ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন। দেশ এগিয়ে যাবে।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে নির্বাচনী আমেজ আরো আগে থেকেই শুরু হয়েছে। গত বছর থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন। প্রতিটি জনসভায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি জাতি দেখেছে। টানা ১৫ বছরের অভূতপূর্ব উন্নয়নে যে মানুষের সাড়া, সেটা জনসভাগুলোতে দেখা গেছে। প্রতিটি জনসভাতেই নির্বাচনী বার্তা দেয়া হয়। আগামী কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী আরো তিনটি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। সেখানেও নির্বাচনী বার্তা থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। তারা মাঠে আছেন। মানুষের কাছে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। শহর থেকে গ্রাম প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকানে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ প্রতি ৫ বছর পর পর জনগণের জন্য পরবর্তী ৫ বছর কি কি করবে, তার জন্য একটি ইশতেহার তৈরি করা হয়। এবারো আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি কাজ শুরু করেছে। আমাদের অন্যান্য প্রস্তুতিগুলোও পুরোদমে চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী সিলেট থেকে প্রচারণা শুরু করবেন। এরপর বরিশালসহ অন্যান্য জেলাগুলোতেও তিনি নির্বাচনী জনসভা করবেন। মোট কথা সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়েছে।


শেয়ার করুন