২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৬:১৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২২
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি

গত ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণের দৃশ্য অবলোকনে বিশ্ববাসীসহ দেশের আপামরসাধারণ যারপরনাই যন্ত্রণাদগ্ধ।

একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে জনগণের হৃদয়ে অসহনীয় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশের ইতিহাসে সময়ের মাত্রায় দীর্ঘতম এ অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জুন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১০ জনসহ সর্বশেষ ৪৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দগ্ধ ও আহতের সংখ্যা চার শতাধিক।

আহতদের মধ্যে রয়েছে পা বিচ্ছিন্ন হওয়া এক পুলিশ কনস্টেবলসহ পুলিশ বাহিনীর ১০ সদস্য। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সূত্রমতে, আহতদের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ এবং সবার শ্বাসনালি ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আহত ৩৩ জন চোখের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে অনেকে কানেও শুনতে পাচ্ছে না।

ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঘোষণা অনুসারে, প্রায় ৬১ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন-উত্তাপ-বিষাক্ত কালো ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে সীতাকুণ্ডের ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দাবি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে এত বড় বিস্ফোরণের দৃষ্টান্ত নির্মিত হয়েছে।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক চিকিৎসক গণমাধ্যমে জানান, ঘটনাস্থলে মানুষ মারা যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো বিস্ফোরণস্থলে যারা ছিলেন, তারা নিঃশ্বাসের সঙ্গে কার্বন ডাইআক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড গ্রহণ করেছেন। দগ্ধ হওয়ার আগে ওই গ্যাস গ্রহণের ফলে হঠাৎ করেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

ওই দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের শরীরে চর্মরোগ বা অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। এছাড়া শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, শ্বাসনালি চিকন হওয়া ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, যদিও কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কম, তবে এর কারণে অকস্মাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড যতটুকু থাকা প্রয়োজন, এর থেকে বেশি হলে আমাদের শরীরে থাকা অক্সিজেনের মাত্রায় অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।

এতে কারও কারও ঝিমুনি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিস্ফোরণে স্বাস্থ্যহানির সঙ্গে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডে পুড়ে আশপাশে একটা ঝাঁজালো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অসুস্থ হয়েছে বেশ কয়েকজন। বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধি ও পরিবেশ-জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের বিষয়টি খাটো করে দেখা মোটেও সমীচীন হবে না।

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনের মতে, সরাসরি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার বিপজ্জনক বিধায় নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় এর জলীয় দ্রবণ পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এটি নিজে দাহ্য না হলেও আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশপাশে রাখলে দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরিতে সক্ষম। এটা শীতল, শুষ্ক ও ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে এ রকম জায়গায় এবং দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ, কোনো দাহ্য পদার্থের কাছে বা আগুন লাগার জায়গায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকলে আগুন ভয়ংকর পর্যায়ে চলে যেতে পারে; এমনকি প্রচণ্ড বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক প্রধান বলেন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল। এটি খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। এটি রাখার জন্য আলাদা কনটেইনার আছে। আলাদাভাবে রাখতে হলে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখতে হবে। রাসায়নিক সংরক্ষণের ম্যাটারিয়াল সেফটি ডিটশিট অনুযায়ী হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাখতে হবে গ্লাস-স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিক কনটেইনারে। অন্য কোনো ধাতুর সংস্পর্শে এটির বিক্রিয়া কার্যক্রম অত্যুজ্জ্বল হয়।

আমাদের সবার জানা, বাংলাদেশি পণ্যের প্রায় অর্ধেকই রপ্তানি হয় সিঙ্গাপুর বন্দর ব্যবহার করে। চট্টগ্রাম থেকে ছোট জাহাজে করে পণ্যভর্তি কনটেইনার রাখা হয় সিঙ্গাপুর বন্দরে। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে বড় জাহাজে করে গন্তব্য দেশে পাঠানো হয়। গত ৯ জুন বন্দর কর্তৃপক্ষ শিপিং কোম্পানিগুলোর কাছে পাঠানো নোটিশে জানায়, সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড চালান পরিবহণ সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে।

‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিয়ে বিধিনিষেধ’ শীর্ষক সিঙ্গাপুর বন্দরের ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ৪ জুন রাতে বাংলাদেশে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর সিঙ্গাপুর বন্দরে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কনটেইনার খালাস হয়। সিঙ্গাপুর বন্দরে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কনটেইনার কতগুলো মজুত করা যাবে, সেটির সীমা রয়েছে।

বর্তমানে বন্দরটিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড চালানের মজুত বেড়ে গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মজুতসীমা অতিক্রম না করার লক্ষ্যে নতুন করে এর চালান গ্রহণ না করতে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। শিপিং ব্যবসাসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, সিঙ্গাপুর বন্দরের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের এ পণ্য রপ্তানি প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে অন্তত ছয়টি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলো হলো-সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এসএম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এইচপি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, ইনফেনিয়া কেমিক্যাল ও আল-রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য দেশে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০৭ কোটি টাকার সমান; যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় তিনগুণ। সমসূত্রে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট ১৪টি দেশে রাসায়নিকটি রপ্তানি হয়। তন্মধ্যে চলতি অর্থবছরে সর্বাপেক্ষা বেশি রপ্তানি হয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে। রপ্তানি হওয়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। উল্লেখ্য, বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিক স্মার্ট গ্রুপেরই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আল-রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স।

৮ জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিপজ্জনক পণ্য সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতঃপূর্বে অপেক্ষাকৃত ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও মূলত সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণের পর ঝুঁকি বিবেচনায় উল্লিখিত পণ্যের ৫৯টি কনটেইনার ধ্বংস বা নিলামে তুলে অপসারণের জন্য কাস্টমসকে চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চিঠি দেওয়ার পরদিনই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের দুটি কনটেইনার নিলামে তুলে বিক্রি করে কাস্টমস। বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনারের কারণে বন্দরের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর নিরাপত্তাঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বন্দর স্থাপনা, জানমাল ও পরিবেশ এবং অগ্নিঝুঁকি রোধকল্পে এসব পণ্য নিলামে তুলে বিক্রি বা ধ্বংস করা প্রয়োজন। বন্দরে পড়ে থাকা পণ্যের অপসারণের দায়িত্বে থাকা কাস্টমস উপকমিশনারের গণমাধ্যমে দেওয়া বর্ণনা মতে, বৈরুতের ঘটনার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রতিমাসেই হচ্ছে দুবার নিলামে পণ্য বিক্রি। এখন প্রতি শনিবার বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে অন্তত ১০০টি কনটেইনার ইনভেন্ট্রি বা সরেজমিন দেখে পণ্যের বর্ণনা তুলে রাখা হচ্ছে, যাতে এসব কনটেইনার নিলামে নেওয়া যায়।

দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরে সংঘটিত বিপুলসংখ্যক অগ্নিকাণ্ডে রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থের সংশ্লিষ্টতার কারণে এসব অগ্নিকাণ্ডের তীব্রতা, ক্ষয়ক্ষতি ও অধিকসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও রাসায়নিক উৎপাদন-পরিবহণ-গুদামজাতকরণে দেশে যুগোপযোগী আইন বা সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান দৃশ্যমান হচ্ছে না। বিদ্যমান নীতিমালা বা গাইডলাইন মেনে চলার ক্ষেত্রে রয়েছে শৈথিল্য। কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পণ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুস্বাক্ষরও সঠিকভাবে না মানার অভিযোগ রয়েছে। বিস্ফোরক আইন, ১৮৮৪-এর আওতায় বাংলাদেশে বিস্ফোরক তৈরি, অধিকারে রাখা বা মজুত, ব্যবহার, বিক্রয়, পরিবহণ ও আমদানি-রপ্তানি করা হয়ে থাকে। এরই আলোকে ২০০৪ সালে তৈরীকৃত বিধিমালায় বাংলাদেশের শিল্প খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব বিস্ফোরক পরিদপ্তরের। কিছু রাসায়নিক দ্রব্যের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। শিল্প খাতের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির অনুমতি-লাইসেন্স প্রদান করে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। জাহাজ ও বন্দরের জন্য ডেঞ্জারাস কার্গোস অ্যাক্ট, ১৯৫৩ আইনেও কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ১৯৯৮ সালে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) স্থাপন ও পরিচালনার জন্য তৈরি করা নীতিমালা, ২০১৬ সালে পরিবর্তীত নীতিমালা এবং ২০২১ সালে এনবিআরের জারীকৃত নতুন নীতিমালা ও প্রজ্ঞাপনে রাসায়নিক পণ্য মজুত-সংরক্ষণ-সরবরাহের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলা নেই।

৬ জুন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (আইএলও) সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে মর্মান্তিক প্রাণহানিতে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে বিবৃতি প্রদান করেছে। বাংলাদেশে রাসায়নিকের মজুত ও পরিচালনায় পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে রাসায়নিকের সঠিক পরিচালনা ও মজুত ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ-সচেতনতা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কৌতূহলী জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতার গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।

এছাড়া ঘটনাটি একটি কার্যকর শিল্প নিরাপত্তা কাঠামো এবং প্রশিক্ষণব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে, যাতে সব ধরনের বিপদ প্রশমন-প্রস্তুতি-প্রতিক্রিয়া-পুনরুদ্ধারে একটি কাঠামোগত পদ্ধতি নিশ্চিত করা যায়। এর জন্য সরকারি দপ্তর, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক প্রতিনিধি ও সুশীলসমাজের দৃঢ় সহযোগিতা-অংশীদারত্ব প্রয়োজন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এ সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায়োগিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে পরিবহণ ও লজিস্টিক খাতে আইন এবং তার প্রয়োগ পর্যালোচনা; আহত, অক্ষম ও কর্মসংক্রান্ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো শ্রমিকদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ-উপার্জন সহায়তা দেওয়া এবং পরিবহণ বা লজিস্টিকসের পাশাপাশি সব ধরনের জরুরি সেবাদানকারীদের লক্ষ্য করে সুরক্ষা অভিযান পরিচালনা করা।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা কি শুধুই দুর্ঘটনা; নাকি নাশকতা-বিষয়টি অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সীতাকুণ্ডের ঘটনাটি নাশকতাসংশ্লিষ্ট কি না, তা নিবিড় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কোম্পানির একজন পরিচালকও এটিকে নাশকতা হিসাবে অভিযুক্ত করেছেন। সচেতন মহল এটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন।

এরই মধ্যে ঘটনা তদন্তে কমপক্ষে ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ঘটনা তদন্তে চুলচেরা বিশ্লেষণের উদ্যোগ নিয়েছেন। অতিসম্প্রতি ইলেকট্রনিক মিডিয়া তদন্তে প্রায় সতেরটি বিষয়ে অবহেলার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। বস্তুত সত্যনিষ্ঠ যথার্থ তদন্তে সত্যিকার দৃশ্যপট প্রতিফলিত হবে এবং প্রাসঙ্গিক কার্যকর সতর্কতা অবলম্বনে সরকারসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তার পরিচয় দেবে-দেশবাসীর সঙ্গে আমিও একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

শেয়ার করুন