চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই কেনার জন্য ৯৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৯ হাজার ৭৪০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন এক বিনিয়োগকারী সংস্থা। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ওপেনএআই এর সব সম্পদ কেনার জন্য প্রযুক্তি কোম্পানিটির বোর্ডের কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাস্কের আইনজীবী মার্ক টোবেরফ।
প্রস্তাবের জবাবে চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক স্যাম অল্টম্যান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, ‘না, ধন্যবাদ, তবে আপনি চাইলে আমরা টুইটার ৯ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে কিনে নিতে পারি।
এই প্রস্তাবটি ইলন মাস্ক এবং ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের নতুন এক অধ্যায়। ২০১৫ সালে তারা একত্রে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে ২০১৮ সালে সংস্থাটি ছেড়ে চলে যান মাস্ক। এরপর থেকেই দুজনের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দেয়।
অল্টম্যান ওপেনএআই-কে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। তবে মাস্ক এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্মত নয়। মাস্কের মতে, ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার সময় মূল্য উদ্দেশ্য ছিল মানবতার উপকারে এআই তৈরি করা। তবে প্রতিষ্ঠান এখন এই নীতি থেকে সরে আসছে।
তবে ওপেনএআই দাবি করছে, উন্নত এআই মডেল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এই প্রস্তাবটি মাস্কের এআই কোম্পানি এক্সএআই এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত ইকুইটি ফার্ম, যেমন: বারন ক্যাপিটাল গ্রুপ এবং ভ্যালর ম্যানেজমেন্টের সমর্থন করছে।
মাস্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এখন সময় এসেছে ওপেনএআইকে আবারও একটি ওপেন সোর্স এবং নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার, যা একসময় ছিল। আমরা এটি নিশ্চিত করবো।’
ইলন মাস্কের পক্ষ থেকে দেওয়া ৯৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবটি ওপেনএআই-এর সর্বশেষ বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক কম। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ওপেনএআই সর্বশেষ তহবিল সংগ্রহ করেছিল, তখন তার বাজারমূল্য ছিল ১৫৭ বিলিয়ন ডলার। তবে বর্তমানে ওপেনএআই-এর মূল্য ৩০০ বিলিয়ন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা মাস্কের প্রস্তাবের তুলনায় অনেক বেশি।
সম্প্রতি বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যার নাম ‘স্টারগেট প্রজেক্ট’। এর প্রকল্পের মূল্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার। প্রাথমিকভাবে ওপেনএআই এবং সফটব্যাংক প্রত্যেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—উন্নত কম্পিউটিং পাওয়ারের মাধ্যমে নতুন ও শক্তিশালী এআই মডেল তৈরি করা।
ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা হওয়া সত্ত্বেও মাস্ক দাবি করেছেন যে, এই প্রকল্পটি ‘যতটুকু অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা আসলে তাদের কাছে নেই’। যদিও তিনি তার মন্তব্যের পক্ষে কোনো বিস্তারিত তথ্য বা প্রমাণ সামনে আনেননি।
২০২২ সালে টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কেনেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তখন থেকেই গুঞ্জন ছিল তিনি পুরো টুইটার কিনে নেবেন। সেই বছরের এপ্রিল মাসে টুইটার কেনার প্রস্তাব দেন তিনি। প্ল্যাটফর্মটি কেনার পর টুইটারকে আরও বেশি উদার, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। টুইটারের শেয়ার প্রতি ৫৪ দশমিক ২ ডলার মূল্য নির্ধারণ করে কোম্পানিটি কেনার জন্য ৪৪ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাব দেন মাস্ক।
শুরুতে, টুইটারের বোর্ড এই প্রস্তাবটি এড়িয়ে যায় এবং মাস্কের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার প্রস্তুতি নেয়। তবে মাস্কের প্রস্তাবটি অনেক বড় অঙ্কের ছিল, যার ফলে বোর্ড শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে পড়তে থাকে। শেষে এই প্রস্তাব মেনে নেয় টুইটারের বোর্ড এবং মাস্কের নেতৃত্বে টুইটার বিক্রি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সব ধরনের আইনি বাধা দূর করে টুইটার কিনে নেন ইলন মাস্ক এবং প্ল্যাটফর্মের নতুন মালিক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এমনকি নিজের অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে নাম মিলিয়ে প্ল্যাটফর্মটির নাম রাখেন ‘এক্স’।
ওপেনএআই কেনার বিষয়টি তাই টুইটারের মতো হতে পারে। কারণ বিষয়টি শুধু অল্টম্যানের হাতে নেই। কোম্পানির বোর্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা মাস্কের প্রস্তাবে রাজি হলে অল্টম্যানও ওপেনএআই বিক্রিতে বাধ্য হবে। এ ছাড়া মাস্ক এখন ট্রাম্পের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনীর হাতে নজিরবিহীনভাবে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই ওপেনএআই ভবিষ্যতে আরও বেশ চাপের সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।