১২ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৩৯:১৭ অপরাহ্ন
ছাপানো বাকি ১২ কোটি বই
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
ছাপানো বাকি ১২ কোটি বই

নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে চলতি নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ছাপানোর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি মাত্র দেড় মাস। অথচ এখনো ছাপানো বাকি প্রায় ১২ কোটি বই। এ অবস্থায় নতুন বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 


আগামী বছরের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হবে। এসব ছাপানো ও বিতরণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 


এনসিটিবি সূত্র জানায়, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ১৫ কোটি বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ২ কোটি বই ছাপানো শেষে বাঁধাইয়ের কাজ চলছে। ২ কোটি বই পোস্ট ডেলিভারি ইন্সপেকশনের অপেক্ষায়। প্রায় ১২ কোটি বই এখনো ছাপানো বাকি। 


নির্ধারিত সময় শেষ হতে চললেও সব বই ছাপানো না হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই ছাপানোতে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেরিতে চুক্তি করা হয়েছে। এখনো সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের অনুমোদিত পাণ্ডুলিপি মুদ্রণকারীদের দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া যেসব বই ছাপানো হয়েছে, সেগুলোর বিলও পরিশোধ করা হয়নি। এসব কারণে এনসিটিবির পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। 


শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই তুলে দেওয়া ছাড়া বইয়ের মান নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, একশ্রেণির মুদ্রণকারী এবারও সরকারি দরের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দরে কাজ নিয়েছেন। মুদ্রিত বইয়ের মানে এর ছাপ পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  


অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, যতবার কম দরে কাজ দেওয়া হয়েছে, ততবারই নিম্নমানের বই হাতে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। গতবারও কম দরে কাজ নিয়েছিলেন মুদ্রণকারীরা। জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোর পর দেখা যায়, অধিকাংশ বই নিম্নমানের নিউজপ্রিন্টে ছাপানো। এর আগে ২০১৬ সালেও প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রথম কম দর দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া 


বইগুলোর অধিকাংশ নিম্নমানের হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। তারপরও কয়েক বছর ধরে একই কৌশলে ছাপানোর কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। 


এদিকে এবার দেরিতে পাণ্ডুলিপি হওয়ার কারণেও বই ছাপানো শেষ হতে বেশি সময় লেগে যাবে বলে জানা গেছে।  পাণ্ডুলিপি দিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বইগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করায় কিছুটা সময় লাগছে। সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইটির পাণ্ডুলিপি শিগগির মুদ্রণকারীদের দেওয়া হবে। আর অষ্টম ও নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইটি ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়া সম্ভব হবে। 


সময়মতো বিল না পাওয়ায় বই ছাপানোর কাজের গতি কম বলে জানান একাধিক মুদ্রণকারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, যেসব বই ইতিমধ্যে এনসিটিবিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিল পরিশোধ করা হয়নি। এতে বাধ্য হয়ে বই ছাপানোর গতি কমাতে হচ্ছে। 


তাঁরা আরও জানান, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে জেলায় জেলায় বই পাঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর নির্দিষ্ট একটি বইয়ের জন্য সব বই একসঙ্গে পাঠানো যাচ্ছে না। কারণ, একটি বই আলাদাভাবে জেলায় জেলায় পাঠালে পরিবহন ব্যয় বাড়বে। 


বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, সব পাণ্ডুলিপি না পাওয়া, দেরিতে চুক্তি করা, সময়মতো বিল না দেওয়ায় বই ছাপানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে মনে হয়, এবারও শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো সব বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না। আর কম দরে কাজ নেওয়ায় এবারও নিম্নমানের বই ছাপাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান। 


ছাপানো হয়ে যাওয়া বইয়ের বিল পরিশোধ না করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এনসিটিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আগে চেকের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা হতো। কিন্তু এবার আইবাস প্লাস প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিল পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। এ জন্য কোড খুলতে দেরি হয়েছে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে এ সমস্যার সমাধান হবে। 


সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হবে এবং নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থী সব বই পাবে।’


শেয়ার করুন