২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৩১:৫৫ অপরাহ্ন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানে দুদিনে বন্ধ ২০ হাসপাতাল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৩-২০২৪
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানে দুদিনে বন্ধ ২০ হাসপাতাল

সারা দেশে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রাজধানীসহ সারা দেশে গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার দুদিনের অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না থাকায় ২০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৮টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও ৭ প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের অভিযান শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।


 


এদিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) একযোগে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। এই অভিযানে রোগী ভাগিয়ে নেওয়াসহ রোগীদের সঙ্গে নানা ধরনের প্রতারণা করার অভিযোগে দালাল চক্রের ৩৮ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।


 


গতকাল দ্বিতীয় দিনের অভিযানে অন্য হাসপাতালের চিকিৎসক দিয়ে ভুল অপারেশনে শামীমা আক্তার মুন্নি নামে এক নারী রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে উত্তরার হাই-কেয়ার কার্ডিয়াক ও নিউরো হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযানে দেখা গেছে, ওই হাসপাতালের কোনো লাইসেন্স নেই। ফলে হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার সহকারী পরিচালক ডা. আহসানুল হকের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।


 


এর আগে গত সোমবার পিত্তথলির পাথর অপসারণের জন্য উত্তরার হাই-কেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয় শামীমা আক্তার মুন্নি নামে এক রোগীর। পরদিন মারা যান তিনি। তার ভাই মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের অভিযোগ, অস্ত্রোপচার যে চিকিৎসকের করার কথা ছিল তিনি করেননি। আরেকজন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছেন, যার ভুল চিকিৎসায় তার বোনের মৃত্যু হয়েছে।


আটত্রিশ বছর বয়সী মুন্নির বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করে মুন্নির পরিবার। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ওই হাসপাতালে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযানে উত্তরার লুবানা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টার নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।


গতকাল দ্বিতীয় দিনের অভিযানের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসান জানান, রাজধানীর ১০টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক, সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজ হাসপাতালে সব ঠিক ছিল। শুধু তথ্য কর্মকর্তার নাম ও ছবি টানাতে বলা হয়েছে। শ্যামলীর আরেকটি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কালার কোডেড বিন সঠিক না থাকায় মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। শ্যামলীর হাই-কেয়ার অর্থোপেডিকস ও জেনারেল হাসপাতালকে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শোকজ করা হয়েছে। একই এলাকার এসবিএফ কিডনি কেয়ার সেন্টারে ফুলটাইম নেফ্রোলজি কনসালট্যান্ট নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পার্টটাইম কনসালট্যান্ট আছে। একই এলাকার ঢাকা ট্রমা সেন্টার ও স্পেশালাইজড হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ল্যাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।


এ ছাড়া উত্তরার লুবানা হাসপাতাল, উত্তরা ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও উত্তরা ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সতর্ক করা হয়েছে


অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সব মিলিয়ে দুদিনে ২০টির বেশি হাসপাতাল বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।


এর আগের দিন গত মঙ্গলবার প্রথম দিনের অভিযানে রাজধানীর ৬টি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতালসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি টিম রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে এই অভিযান পরিচালনা করে।


অভিযানে দেখা গেছে, মিরপুরের কালশী সড়কে অবস্থিত এএইচএস ডায়ালাইসিস সেন্টারের লাইসেন্স নেই। সেখানে রোগীর ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। পাশের এশিয়া হেলথ কেয়ার নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান দুই বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে। প্রতিষ্ঠানের ল্যাবের ফ্রিজে খাবার রাখা ছিল। এমনকি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরাও লাইসেন্স বিষয়ে কিছু জানেন না। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উল্টো পাশে মুক্তিযুদ্ধ টাওয়ারে অবস্থিত বেশ কিছু হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়। পাওয়া যায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনার অভিযোগ। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও পরিবেশ, চিকিৎসাব্যবস্থা, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটারসহ নানা অনিয়ম পান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কেউ আবার ২০ বেডের অনুমোদন নিয়ে করেছে ২৮ বেডের হাসপাতাল। নেই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও।


৩৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড : গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-২-এর উপ-অধিনায়ক মেজর নাজমুল্লাহেল ওয়াদুদ জানান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালে একযোগে অভিযান চালান তারা। দালালবিরোধী এই অভিযানে গ্রেপ্তার দালাল চক্রের ৩৮ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দালাল চক্রের সদস্যরা এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনের দ্রুত ও ভালো চিকিৎসাসেবার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতেন। তারা অল্প সময়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন।


ঢাকার বাইরে ৭ ক্লিনিক ৪ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ : স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে শেরপুর, নীলফামারীর ডোমার ও পটুয়াখালীর বাউফলে জরিমানা ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১১টি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:


শেরপুর : স্বাস্থ্য বিভাগের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। জেলায় ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনে পাঁচ বেসরকারি ক্লিনিককে অর্থদ- এবং একটি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে।


ক্লিনিকগুলোর মধ্যে আল সাফা জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওটিতে অনিয়ম থাকায় ওটি সিলগালা এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, হাজি নিয়ামতউল্লাহ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে অনিয়ম থাকায় প্যাথলজিক্যাল রন  সেন্টার সিলগালা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, দারুস সিফা হাসপাতালকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, ইউনাইটেড হাসপাতালে ডাক্তারের স্বাক্ষর ও বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর ঠিক না থাকায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, ইউনিক প্যাথলজিক্যাল ল্যাব সেন্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং নিরাপদ জেনারেল হাসপাতালকে নানা অনিয়মের অভিযোগে সিলগালা করে দেওয়া হয়।


অভিযানে জেলার সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য, সদর উপজেলার পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন, ডা. হিমেলসহ স্বাস্থ্যে বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত  শেরপুরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান অব্যাহত থাকবে। মোবাইল কোর্টের বিচারক ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিন বিশ্বাস।


নীলফামারী : নিবন্ধন না থাকায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। গতকাল বুধবার দুপুরে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে উপস্থিত থেকে সেগুলো বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দেন।


সরকারি নিয়ম না মানা এবং নিবন্ধন না থাকায় শহরের আনছার আলী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ট্রাস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বোড়াগাড়ী নিউলাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে বন্ধ করে দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আল আমিন রহমান।


বাউফল (পটুয়াখালী) : বাউফলে যোগ্যতা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে চিকিৎসাসেবা প্রদান করার অপরাধে এক ব্যক্তিকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের কালিশুরী বাজারে অভিযান চালিয়ে ফেয়ার মেডিকেল সার্ভিসেস ডায়াগনস্টিকের স্বত্বাধিকারী ও ভুয়া ডাক্তার মহিউদ্দিন আহম্মেদকে এ কারাদন্ড দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ড। একই সঙ্গে নিউলাইফ কেয়ার ক্লিনিকের সনদ না থাকা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট রাখায় প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাসহ সিলগালা করা হয়।


প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিরা


শেয়ার করুন