ভারতের অধিকাংশ শহরে শীতের পদধ্বনি পড়লেও ব্যতিক্রম মুম্বাই। আরব সাগরের মৃদুমন্দ বাতাস, মেরিন ড্রাইভের প্রশস্ত পথ-মনকে প্রশান্তি দেবে। এদিকে বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের রথ ছুটছে। লিগপর্বে নয়ে নয় জয়ে সেমিফাইনালে রোহিত শর্মারা। টিকিটের চাহিদায় যিনি নিজের ফোন বন্ধ রাখছেন! এভাবে জিতে সেমিফাইনালে উঠলে তো আত্মবিশ্বাস আকাশ ছোঁবেই। তবুও কি স্বস্তিতে ভারত? প্রতিপক্ষ যে নিউজিল্যান্ড। ভারতের কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, চার বছর আগের ওল্ড ট্রাফোর্ডের ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে মুম্বাইয়ে! ভারতের প্রতিশোধের ম্যাচ? নাকি নিউজিল্যান্ডের আরেকটি নিঃশব্দ বিষাক্ত ছোবল! শচীন টেন্ডুলকারের ওয়াংখেড়েতে আজ ফাইনালের আগে ভারত-নিউজিল্যান্ডের যুদ্ধ!
বিরাট কোহলি বনাম ট্রেন্ট বোল্ট, জাসপ্রিত বুমরা বনাম কেইন উইলিয়ামসন ক্রিকেটীয় দ্বৈরথে মুম্বাইয়ে আজ আলাদা উৎসবের রূপ নেবে নিশ্চিত। তবে ক্রিকেটের বাইরে ফুটবলের আরেকজনকে ঘিরে ঔজ্জ্বল্য ছড়ানোর প্রত্যাশা। ফুটবলের সেই তারকা ডেভিড বেকহ্যাম। সব ঠিক থাকলে মুম্বাইয়ে তিনি আজ দর্শক হয়ে সেমিফাইনালে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করবেন। চার বছর আগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুদিনের সেই সেমিফাইনাল এখনো ভারতীয়দের যন্ত্রণাক্লিষ্ট করে।
হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকে ম্যানচেস্টার ম্যাচে এমএস ধোনির পতন হয়। এরপর গত চার বছরে ভারত ৫০ ক্রিকেটারকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলিয়েছে ৬৬ ম্যাচে। সেখান থেকেই স্বপ্নের ১৫। কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেবেন এমন চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল অবশেষে রাহুল দ্রাবিড়ের ১৫ জনকে নিশ্চিত করেছে। ২০ বছর আগের খেলোয়াড় রাহুল দ্রাবিড় সেদিন ফাইনালে গিয়েও ছুঁতে পারেননি স্বপ্নময় ট্রফি। এবার শিষ্যদের দিয়ে সেই ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে মরিয়া। তার আগে সেরা ম্যাচটা জিতে আত্মবিশ্বাসের চাপটাও হালকা করতে চান।
মঙ্গলবার দুপুরের পর অনুশীলন করে থামল নিউজিল্যান্ড। প্রেসবক্স থেকে ডান পাশের দুই উইকেটে ছিল অনুশীলন। উইকেটে বল পড়লেই ধুলো উড়ে যাচ্ছিল। যেন লাঙ্গল দেওয়া খেত! সন্ধ্যার আগে সেখানে বাঁ-পাশের দুই উইকেটে স্বাগতিকরা নিজেদের ঝালিয়ে নেন। আজ খেলা হবে ঠিক এই দুয়ের মাঝে। এই বাইশগজ যে মেরিন ড্রাইভের আবহাওয়া খুব জ্বালাচ্ছে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের তাণ্ডব বাদ দিলে পরে ব্যাট করে যে এখানে কেউ জিততে পারেনি! ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা সবাই উড়ে গেছে! বলা হচ্ছে ফ্লাডলাইটের আলোয় ওয়াংখেড়েতে ব্যাট করা ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিনতম কাজের একটি! তাহলে আজ কি টসই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে! যেখানে প্রথম ব্যাট করা দলের গড় ৩৫৭। আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, জাসপ্রিত বুমরা, ইশান কিষান খেলেন। ২২ গজে কি আছে তাদের চেয়ে ভালো তো কিউরেটরেরও জানার কথা নয়। অনেকের ট্রফি করে হোক আর অবিশ্বাস্য বোলিং দেখে হোক উড়ো খবর বেরিয়েছিল ভারতের বোলিংয়ের সময় বল পালটে দিচ্ছে আইসিসি! বুমরা-মোহাম্মদ শামি-রবীন্দ জাদেজা প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের নিয়ে যেভাবে ছেলেখেলা খেলছেন, তাতে এমনটা বলাই স্বাভাবিক। যতই ঘরের বারান্দা হোক না কেন, রোহিত শর্মা জানালেন চাপ সবখানেই আছে। তিনি বলেন, ‘লিগপর্ব থেকে সেমিফাইনাল সব ম্যাচেই চাপ থাকবেই।’ তবে উইকেট নিয়ে যাদের সবচেয়ে ভালো ধারণা, তারা জানিয়ে দিয়েছেন সেমিফাইনালের উইকেট অন্য ম্যাচগুলোর মতো হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্ন, একটু ইতিহাসে ঢুঁ মারতে চাই। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে’র ঘটনা। ৭০ বছর আগের কথা! এটুকু বলতেই মাইক হাতে উইলিয়ামসন বলেন, ‘আমার মনে আছে!’ তাৎক্ষণিক এই প্রতিক্রিয়ায় প্রেসবক্সে হাসির রোল ওঠে। এরপর আরেক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এখানে যা দেখলেন তাতে যে কেউ যে কাউকে হারাতে পারে। আর দুটো ভালো মানের দল মুখোমুখি হলে তো প্রভাব পড়েই। শেষ পর্যায়ে আছি। নিজেদের সতেজ রেখে ভালো ক্রিকেট খেলতে চাইব, স্নায়ু ধরে রেখে যারা এগোতে পারবে তাদের মুখেই হাসি ফুটবে।’
নিউজিল্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল টানা চার জয়ে। এরপর টানা চার হার। নবম ম্যাচে তারা শ্রীলংকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। ভারতের কোনো হার নেই। হারের স্বাদ কেমন সেটা এখন তারা পায়নি। ওয়াংখেড়েতে নিউজিল্যান্ড কোনো ম্যাচ খেলেনি এর আগে। ভারত এবার নয় ভেন্যুতে নয়টি ম্যাচ খেলেছে। ওয়াংখেড়ে যতই ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের তীর্থস্থান হোক না কেন, এখানে ভয়ংকর সব দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে স্বাগতিকরা। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে গ্রাহাম গুচদের সুইপ আঘাতে ইন্দ পতন, নেহরু কাপে ভিভ রিচার্ডসের ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হার, ২০১৬ টি ২০ বিশ্বকাপে আন্দে রাসেলদের কাছে আত্মসমর্পণ। আরও একটি সেমিফাইনাল সেই ওয়াংখেড়েতে। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ভারতের শাপমোচনের সব সুযোগই কি এক পরীক্ষায়!