ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলে এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি রুটে কমপক্ষে ২৪ জোড়া (৪৮টি) ট্রেন চালানো সম্ভব। এতে বছরে আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। রেলে আয় ও যাত্রী বাড়াতে নতুন রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। পদ্মা সেতু রেললিংক, দোহাজারী-কক্সবাজার ও খুলনা-মোংলা লাইনে পুরোদমে ট্রেন চালালে লোকসান কমবে।
রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলে চলা দুটি ট্রেন আগের রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করছে। সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ১ ও ২ নভেম্বর থেকে পুরোদমে চলছে। এতে আগের চেয়ে প্রায় সোয়া ৪ ঘণ্টা কম সময় লাগছে। আগে ট্রেন দুটি ঢাকা থেকে যমুনা সেতু হয়ে চলায় ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগত। আগে দুটি ট্রেনে গড়ে ৭৭ শতাংশ টিকিট বিক্রি হতো। বর্তমানে শত ভাগ টিকিট বিক্রির পর আরও ১৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার দপ্তর সূত্র জানায়, নতুন রুটে ঢাকা থেকে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। বিশেষ করে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভারতগামী শত শত যাত্রী ট্রেনটি দিয়ে চলাচল করছে। শতভাগ টিকিট বিক্রি হওয়ার পরও যাত্রীদের অনুরোধে ১৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিটও বিক্রি করা হচ্ছে। নতুন রুটে ন্যূনতম ১২ জোড়া (২৪টি ট্রেন) ট্রেন চালানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজনী ইঞ্জিন, কোচ, রোলিং স্টক সরবরাহ জরুরি। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন চালিয়ে লাভও বেশি হচ্ছে। শতভাগের উপরে যাত্রী চলছে। নতুন রুটে ১২ জোড়া নতুন ট্রেন চালানো হলে বছরে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা আয় হবে।
পদ্মা সেতু হয়ে মধুমতি এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকায় চলাচল করার কথা ছিল। রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন চালক ও লোকবলের অভাবে ট্রেন দুটি চালানো যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, পশ্চিম-উত্তরাঞ্চল থেকে ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন হয়ে ঢাকা পর্যন্ত অন্তত ৭ থেকে ৮ জোড়া মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালানো সম্ভব। এ পথে লাইন উন্নত হওয়ায় সময় কম লাগবে। সাধারণ যাত্রীরা এ রুট ব্যবহার করে ট্রেনে চড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী সংখ্যাও বাড়ছে। এমন অবস্থায় নতুন রুটে পর্যাপ্ত ট্রেন চালানো হলে যাত্রী পরিবহণ বৃদ্ধির সঙ্গে সেবাও নিশ্চিত হবে। ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর কথা রয়েছে। রেল কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সবচেয়ে কম ট্রেন চলাচল করে। শুধু ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ট্রেন চালানো সম্ভব। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ডুয়েলগেজ। এ রুটে ঢাকা থেকে অন্তত ১২ জোড়া (২৪টি) ট্রেন চালানো সম্ভব। এ রুটে মেইল, কমিউটার অথবা আন্তঃনগর-সব ধরনের ট্রেন চলবে। যাত্রী ও মালবাহী উভয় ট্রেন লাভজনক অবস্থায় চালানো সম্ভব।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ১৮৮ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে ট্রেনে যাওয়া যাবে। এছাড়া যারা এসি চেয়ার, কেবিন-বার্থ সিটে যাবেন তারা ৯৬১ থেকে ১৭২৫ টাকার মধ্যে কক্সবাজারে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে।
সিলেটবাসীর দাবি-সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনা করা হোক। সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের নিয়মিত যাত্রী বিল্লাল হোসেন রিংকু জানান, কক্সবাজার সবার প্রিয় জায়গা, শুধু ঢাকাবাসীর নয়। সিলেট থেকে চট্টগ্রাম মাত্র ২টি ট্রেন চলাচল করছে। এ রুটে আরও চারগুণ ট্রেন চালানো সম্ভব। এ রুটে ট্রেন বাড়িয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নেওয়া হলে প্রতিটি ট্রেনে যাত্রী ভরপুর থাকবে। রেলের আয় বাড়বে।
রেলওয়ে ট্রাফিক দপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৬ জোড়া ট্রেন এবং ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে তিন জোড়া ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে রেলওয়ে রোলিং স্টক দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু দুই রুটেই কমপক্ষে ২৪ জোড়া (৪৮টি) ট্রেন চালানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন কোচ-ইঞ্জিন ও রোলিং স্টক সরবরাহ জরুরি। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় রোলিং স্টক সরবরাহ করা হলে শুরু থেকে রুটে পর্যাপ্ত ট্রেন চালানো যেত। এতে উন্নয়ন প্রকল্পের যথাযথ সুফল পেত সাধারণ যাত্রীরা। রেলের আয়ও বাড়ত।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির যুগান্তরকে বলেন, নতুন রুটে ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। যাত্রীরা বেশ খুশি। আমাদের আয়ও বাড়ছে। শতভাগের বেশি যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে আরও দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালাব। একই সঙ্গে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ছয়টি ট্রেন চালানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে যাত্রী পরিবহণে ৬৬০ কোটি টাকা আয়ের টার্গেট ধরা হয়েছিল। ওই বছর প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। নতুন রুটে যথাযথ ট্রেন পরিচালনা করা গেলে বছরে আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।