সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নে কৃষি জমিতে চলছে অবাধে পুকুর খনন। স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমন কৃষি জমির ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক।
নামমাত্র কিছু অভিযান চললেও প্রভাবশালীরা থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দিনে-রাতে অবাধে চলছে পুকুর খননের কাজ। এতে করে শুধু কৃষি জমিই নষ্ট হচ্ছে না- সেই সাথে পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের রাতোয়াল, মালিপাড়া সরগাছি, সাতারপাড়া, দনকুড়ি এলাকায় প্রায় তিনশথ থেকে চারশ’ বিঘা জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খননের কাজ। মাঠের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তাকালেই শুধু পুকুর আর পুকুর অন্য কিছু দেখা যায় না।
এতে শুধু কৃষি জমিই কমছে না, মাটি কাটা ট্রলি চলাচলের কারণে সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এর অবসান না হলে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
তবে জেলা প্রশাসনের দাবি পুকুর খনন বন্ধে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে কৃষি জমির ধ্বংস লীলা চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী আ: লতিফ। তিনি রাতোয়াল স্কুল সংলগ্ন এলাকা শুকুরের বাড়ির পাশে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা প্রতিবাদ করলে প্রভাবশালী আ: লতিফ তার মাস্তান বাহিনী দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এবং তার মোটরসাইকেল বাহিনী রাত আটটা থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় টহল দিচ্ছে। মোড়ে মোড়ে লতিফের বাহিনীরা বলছে প্রশাসনের সব মহলকে টাকা ম্যানেজ করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কেও প্রতিবাদ করলে তার ফল ভাল হবে না। রাতোয়ালে গ্রামে আ: লতিফের পুকুরের পাশে আরেক প্রভাবশালী ব্যাক্তি আফতাব উদ্দিন শাহ (রন্জু) স্থানীয় এক সাংসদ সদস্যের ফুপাতো ভাইয়ের ছত্রছায়ায় প্রায় ৪০ বিঘা ফসলি জমি ধ্বংস করে পুকুর খনন করছেন। এছাড়া মালিপাড়া বিলে মিজান নামের এক চায়ের দোকানদার প্রায় ৫০ বিঘা কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন করছে। উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের দনকুড়ি গ্রামে বিএনপি নেতা আতাউর এর পুকুর খনন করছে ভেকু দালাল হান্নান। রাতের আঁধারে গ্রামের পাকা রাস্তা নষ্ট করে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহন করছে রাত ৯ টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত।
ভেকু দালাল হান্নান প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
অপরদিকে,ছাতারপাড়া বিলে তাহেরপুরের এক প্রভাবশালী ইট ভাটা মালিক গ্রামীণ রাস্তার বেহাল অবস্থা সৃষ্টি করেছে অবৈধ পুকুর খননের মাটিবাহী ট্রাক্টর দিয়ে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ভেকুগাড়ি (স্কেবেটর) সরবরাহকারী জানান, পুঠিয়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ও সাধনপুর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তার দিকনির্দেশনায় রাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কখনো কখনো উপর মহল থেকে ফোন দিয়ে পুলিশকে জানালে আমাদের ক্ষনিকের জন্য পুকুর খনন কাজ বন্ধ রাখতে বলে। পরে লাইন ক্লিয়ার হলে আবার পুকুর খনন করার ভেকুগাড়ি চালু করতে বলেন। এর জন্য প্রশাসনকে বিঘা প্রতি মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয় পুকুর খননকারীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, ফসলি জমিতে নতুন করে কোন পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুঠিয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) আরাফাত আমান আজিজ মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ পুকুর খননের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও ইউএনও স্যার বক্তব্য দিবে। এর আগে আপনি অভিযান করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে অভিযান করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, অবৈধ পুকুর খনন ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।