২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:০৮:২৩ পূর্বাহ্ন
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১১-২০২৩
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশ

গাজাসহ ফিলিস্তিনে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ। অন্য দেশগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকা, বলিভিয়া, কমোরোস ও জিবুতি। ফিলিস্তিনের ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি আইসিসি যেন জরুরি মনোযোগ দেয়, এটা নিশ্চিত করতেই এই অনুরোধ করা হয়েছে।

তদন্ত আহ্বানকারী বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ আইসিসির সদস্য হলেও ইসরাইল এর বাইরে রয়েছে। অর্থাৎ ইসরাইল আইসিসির সদস্য দেশ নয়। তবে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সদস্য নয় এমন দেশের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে আইসিসি। মিয়ানমারও আইসিসির সদস্য নয় এবং দেশটি এই আদালতকে স্বীকার করে না। তার পরও রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালানোর কারণে ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির অভিযোগের তদন্ত আইসিসি করছে।

আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা এবং দখলীকৃত পশ্চিমতীরে ২০২১ সালের মার্চ থেকেই তদন্ত চলছে। তা এখন বিস্তৃত হয়েছে। আমি সম্প্রতি মিসর এবং অবরুদ্ধ গাজার মধ্যবর্তী প্রধান ক্রসিং পয়েন্ট রাফায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমার টিম এ যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর বিপুল পরিমাণ তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। জীবিতদের কথা শুনতে, নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর কথা শুনতে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলতে আমি অব্যাহতভাবে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল সফর করব। তিনি বলেন, ইসরাইল আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র না হলেও যুদ্ধাপরাধের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে আমার অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দেয়া হবে। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো তথ্যপ্রমাণ জমা দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।


এ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের দাবিতে আইসিসির সদস্যদের যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যায় দায়মুক্তি বন্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আশা করি, ভয়াবহ অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার দেয়ার ক্ষেত্রে ফিলিস্তিন পরিস্থিতিকে অগ্রাধিকার দেবে আইসিসি।

এএফপি জানিয়েছে, গাজায় যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের আইনজীবীরা যেমন আইসিসির পদক্ষেপ আহ্বান করেছেন, তেমনি ইসরাইলের যেসব ব্যক্তিকে জিম্মি করা হয়েছে, তাদের পরিবারগুলোও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে করিম খানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইলি এমন ৯টি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছেন আইনজীবী ফ্রাঁসোয়া জিমেরে। তিনি বলেছেন, তদন্ত এগিয়ে চলছে। যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার জন্য যেসব পরিবার গ্রেফতারি পরোয়ানা দাবি করছেন, তাদের পক্ষে তিনি একটি কূটনৈতিক বার্তা জমা দিয়েছেন।


যেকোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইসিসিকে অনুরোধ করতে পারে। কিন্তু আইসিসি তা সব সময় আমলে নিতে বাধ্য নয়। ইসরাইল আইসিসির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও জিমেরে বলেন, ইসরাইলিরা এই আদালতের ওপর, প্রসিকিউটর ও পেশাদারদের ওপর আস্থা রাখে।

২০১৫ সাল থেকে ফিলিস্তিন আইসিসির সদস্য। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের নৃশংসতায় গাজায় কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার শিশু এবং তিন হাজার ৩০০ নারী রয়েছে। অন্য দিকে ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ২০০।

গাজায় হাসপাতালে হামলার নিন্দা : গাজায় হাসপাতালগুলোতে ইসরাইলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিক ও স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে ইসরাইলি হামলায় নিরপরাধ নারী ও শিশুদের ক্রমবর্ধমান হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আল শেখা মেডিক্যাল হাসপাতাল ও জর্দানিয়ান ফিল্ড হাসপাতালে ইসরাইলের দখলদার বাহিনীর অভিযানের আমরা নিন্দা জানাই। যেকোনো অবস্থায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা অগ্রহণযোগ্য। এসব ঘটনায় ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করছে। এ ধরনের অমানবিক আচরনকে প্রত্যাখ্যান করা এবং ফিলিস্তিনে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে।



শেয়ার করুন