১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:২২:৩৭ অপরাহ্ন
সাক্কুর ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগে যা বলল ইসি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২২
সাক্কুর ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগে যা বলল ইসি

‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে, ফলাফল যাই হোক মেনে নেব’- কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ শেষে এমন কথা বললেও ফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ তুলেছেন। তবে সাক্কুর এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, রেজাল্ট ম্যানিপুলেট করার সুযোগ রিটার্নিং অফিসারের নেই। প্রার্থীর এজেন্টদের কাছে কপি আছে। এরপরও কারো সন্দেহ থাকলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রার্থীদের সন্দেহের প্রসঙ্গ টেনে ইসি আলমগীর বলেন, কোনো সন্দেহ থাকলে পাসওয়ার্ড দিয়ে ইভিএম ওপেন করে আবার দেখা যাবে। অনেকে আছেন না জেনে, জানার ভান করে এগুলো করেন। আবার অনেকে আছে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার চালান। 

ইসি ফল পরিবর্তন করেছে- এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিশন তো সরাসরি নির্বাচন পরিচালনা করে না। পরিচালনা করেন রিটার্নিং অফিসার। তিনি কেন্দ্র ঠিক করেন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। আসলে নির্বাচন করেন প্রিজাইডিং অফিসার। তারা ফল প্রকাশ করে কেন্দ্রে টানিয়ে দেন, ঘোষণা দেন, সেখানে প্রার্থীর এজেন্টদের সই নেন। একটা কপি তাদের দেন। একটি মালপত্রের সঙ্গে পাঠান। আরেকটি কপি রিটার্নিং অফিসারের কাছে থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা শুধু কম্পাইলেশন  করেন। তার কাজ হলো কেবল পড়ে শোনানো। তাহলে তিনি কীভাবে পরিবর্তন করবেন, পরিবর্ধন করবেন, পরিমার্জন করবেন? সে সুযোগ আছে?’

ইসি আলমগীর বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা কেবল দেখেন যে, বেসরকারি ফলে যোগ-বিয়োগ ঠিক আছে কি না, সবার সই আছে কি না, ইভিএমের সঙ্গে মিল আছে কি না। এরপর তিনি আমাদের কাছে পাঠান। এরপর আমরা গেজেট প্রকাশের আগে দেখি, সেখানে ভুল থাকলে আমরা আবার ফেরত পাঠাই।’

এ সময় ইভিএমে ভোটগ্রহণে ‘স্লো’ হওয়ার প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি।  কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়েছে উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের সবাই তো এ রকম নয়, অনেকেই বোঝেন না, বয়স বেশি থাকে। এ ছাড়া বৃষ্টি ছিল। এসব কারণে ধীরগতি হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়নি। আপনাদের চোখ দিয়ে যা দেখেছি, সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে। যারা প্রার্থী ছিলেন, তারাও কিন্তু সেটি বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার সুযোগ নেই।’

ফল ঘোষণার সময় দেরি এবং ওই সময়ের পরিস্থিতির বিষয়ে উঠা নানা প্রশ্নের বিষয়ে ইসি আলমগীর বলেন, ‘কুমিল্লার ১০৫টি কেন্দ্রের ফল ঠিক আছে। এটি আসলে আগে দেখা হয় ঠিক আছে কি না। ১০১ কেন্দ্রের ফল দেওয়ার পর প্রার্থীর সমর্থকরা এসে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেন। রেজাল্ট ঘোষণা যে দেবেন, কার কথা কে শোনে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, রিটার্নিং অফিসার এসপি ও  ডিসিকে ফোন করেন, আমাদের জানান। তারপর পরিবেশ সামাল দেন তারা। না হলে তো বলতেন, কী ঘোষণা দিয়েছে তা তো আমরা শুনিনি।’

সংসদ নির্বাচনে কি এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইন আইনের জায়গায় থাকবে। আইন যতদিন পরিবর্তন না হচ্ছে যখন প্রয়োজন হবে, তখন দেখব।’

প্রসঙ্গত, কুসিক নির্বাচনে ফল ঘোষণার শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল শুরু হয়। ফল ঘোষণার আগে দুই প্রার্থীরই জয়ী হওয়ার গুজব ছড়িয়ে এই হট্টগোল হয়। এ কারণে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।

উল্লেখযোগ্য কোনো সংঘাত-সহিংসতা ছাড়াই বুধবার শেষ হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪টায়। উৎসবমুখর পরিবেশেই এই নির্বাচন হয়েছে। ভোট শেষে তিন মেয়র প্রার্থীই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদও দিয়েছেন তারা।

বুধবার শেষ মুহূর্তে নানা নাটকীয়তার পর কুসিক নির্বাচনে নতুন নগরপিতা পায় আওয়ামী লীগ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ৩৪৩ ভোটে জয় পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত।বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারিভাবে এ ফল ঘোষণা করেন। চূড়ান্ত ফলে আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী (বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত) মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট পেয়েছেন। বিএনপির বহিষ্কৃত আরেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।রাতে ফল ঘোষণার শেষ সময়ে সৃষ্ট উত্তেজনা ছাড়া সারা দিন শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয় কুসিকের ভোটগ্রহণ।

শেয়ার করুন