০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৩৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
আন্দোলন তুঙ্গে নিতে এবার কঠোর হবে বিএনপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৮-২০২৩
আন্দোলন তুঙ্গে নিতে এবার কঠোর হবে বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের পতন ঘটাতে চায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল। সে লক্ষ্যে দলগুলো আন্দোলনের রূপরেখা সাজাচ্ছে। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ ঠিক না হলেও সেপ্টেম্বর থেকেই চলমান আন্দোলন চূড়ায় উঠতে থাকবে। সরকারের আচরণ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারিত হবে। তবে সোজা পথে যে কাজ হবে না, সেটি ধরে নিয়েই প্রয়োজনে কঠোর হওয়ারও আভাস দিয়েছেন বিএনপি ও মিত্র দলের কয়েকজন নেতা।


ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ বিরোধী দল চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।


গত ১২ জুলাই সরকার পতনের এক দফা ঘোষণার পর এরই মধ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীতে এবং শনিবার রাজধানীসহ সারা দেশে কালো পতাকা গণমিছিল করার কর্মসূচি রয়েছে। গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।


বিএনপির একাধিক নেতা জানান, আগামী মাস থেকে চলমান আন্দোলনের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সে দিন থেকে এই চেষ্টা শুরু হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীতে শোভাযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে এই শোভাযাত্রার সময়সূচি এখনো ঘোষণা করা হয়নি। শোভাযাত্রায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা আছে। ওই শোভাযাত্রা থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।


ওই নেতারা আরও জানান, সেপ্টেম্বরে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়ারও চিন্তা আছে। তাঁরা বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় নানা ধরনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে সে কৌশল এখনই প্রকাশ করার মতো অবস্থা হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আরও কিছুদিন সময় নেওয়া দরকার। তবে আগামী দিনে অবস্থান, ঘেরাও কর্মসূচির পাশাপাশি প্রয়োজনে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধের পরিকল্পনা 

আছে বলেও কেউ কেউ জানান। যদিও এ বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে চান না তাঁরা।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকারের আচরণের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। সরকার সহিংস হলে, উসকে দিলে তো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি না-ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবরোধও হতে পারে, আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’ 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বুধবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘বড় রকমের ঝাঁকুনি দেওয়া দরকার, বড় রকমের একটা যুদ্ধ দরকার, সংগ্রাম দরকার। এই সংগ্রাম, এই যুদ্ধে আমরা আছি।’


এক দফার আন্দোলনের মধ্যে গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি বেশ আলোচিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশে বিপুল গণজমায়েত এক দফার আন্দোলনে এ পর্যন্ত বড় অর্জন বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন। অবশ্য পরদিনের নানা ঘটনায় সমালোচনাও আছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কয়েকজন নেতা জানান, আন্দোলন নিয়ে আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণে বেশ চিন্তা-ভাবনা করে এগোনো হচ্ছে। কারণ, আর ভুল করার সুযোগ নেই। বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর মধ্যে প্রায়ই আলোচনা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা চলছে।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছোট-বড় সব দলকে সমান গুরুত্ব দিয়ে তাদের মতামত ও পরামর্শ বিবেচনা করা হচ্ছে। সবার প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী দিনের আন্দোলনের গতিপথ ঠিক করা হচ্ছে।


বিএনপির একটি সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনের পথে মামলা-ধরপাকড়ের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিএনপিসহ মিত্র দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেপ্তার হলে তাঁদের পরিবর্তে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, তা-ও ঠিক করে রাখা হচ্ছে।


যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের নেতা ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের সহিংস-সশস্ত্র আক্রমণাত্মক ভূমিকার বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিরক্ষামূলক আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নীরবে-নিভৃতে একাধিক কৌশল আলোচিত হচ্ছে, যা এখনই প্রকাশ করার মতো পরিপক্ব হয়নি।’


শেয়ার করুন