১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪৪:১৪ পূর্বাহ্ন
গরমের পর আসতে পারে বন্যার ধাক্কা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৫-২০২৪
গরমের পর আসতে পারে বন্যার ধাক্কা

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ কেটেছে সপ্তাহ ঘুরতে চলল। এর মধ্যেই আবার গরমের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে সংকট এখানেই শেষ নয়। এবার বর্ষায় বৃষ্টিও বেশি হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ায়। সেই বৃষ্টির প্রভাবে ভাটির দেশ বাংলাদেশে হতে পারে বন্যা। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, জলবায়ু চক্র এল নিনো দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড গরম, দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুসহ নানা কারণে আগামী জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গতবারের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে।


ভারতের পুনেতে গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট ফোরামের ২৮তম অধিবেশনের বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিবৃতি অনুসারে, প্রশান্ত মহাসাগরের ক্রান্তীয় অঞ্চলে এখন এল নিনো জলবায়ু চক্র বিরাজ করছে। তবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের প্রথমার্ধে দক্ষিণ গোলার্ধে এল নিনোর প্রভাব কমবে। মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে লা নিনা জলবায়ু চক্র শুরু হবে।


আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে লা নিনার প্রভাব শুরু হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম এবং বাংলাদেশে বৃষ্টি বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় বৃষ্টির সেই পানি গড়াবে এই দেশের ওপর দিয়েই। ফলে এখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।


বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ পুনে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, জুন-জুলাই থেকে দেশে লা নিনার প্রভাব শুরু হবে। লা নিনা হলে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃষ্টি ও বন্যা বাড়ে। তবে মিয়ানমার অংশে বৃষ্টি কম হয়। দেশে সিলেট অংশে বৃষ্টি কম থাকবে। তবে রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলে বৃষ্টি বেশি হবে।


এল নিনো ও লা নিনা কী


জলবায়ু চক্রের যে পর্যায়ে পূর্ব ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়ে যায়, তাকে এল নিনো বলে। আর উষ্ণতা কমলে তা লা নিনা নামে পরিচিত। এল নিনোর প্রভাবে গরম বাড়ে, আর লা নিনার প্রভাবে তাপমাত্রা কমে ও বৃষ্টি বাড়ে।


আবহাওয়াবিদদের তথ্যমতে, ২০১৯ সাল থেকে টানা তিন বছর লা নিনার দাপট ছিল সারা বিশ্বে। সাধারণত দুই থেকে সাত বছর পরপর এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা ১৮ মাসের বেশি সময় স্থায়ী হয়।


গত বছরই এল নিনোর আবির্ভাবের কথা নিশ্চিত করেছিল বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অধিদপ্তরও জানিয়েছিল, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এল নিনোর প্রভাব থাকবে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে এল নিনোর প্রভাব খুব একটা পড়ে না। তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটেছে। টানা ৩৩ দিনের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ তারই প্রমাণ। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৩৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড ভেঙে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল।


লা নিনায় বাংলাদেশে কী ঘটতে পারে


এল নিনো ও লা নিনা ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বৃষ্টিপাত নির্ভর করে আরও একটি বিষয়ের ওপর, যা ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোল বা আইওডি নামে পরিচিত। এটিও জলবায়ু চক্রের একটি অংশ। তবে তা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। আইওডির ইতিবাচক পর্যায়ে উষ্ণ পানি মহাসাগরের পশ্চিমাংশে চলে যায়। আর সাগরের গভীরের শীতল পানি পূর্ব ভারত মহাসাগরের পৃষ্ঠে উঠে আসে। এর ফলে মহাসাগরের পূর্বাঞ্চল, অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতে তাপমাত্রা কমে যায়। আইওডির নেতিবাচক পর্যায়ে ঘটে উল্টোটা। এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতে তাপমাত্রা বাড়ে। এটি ইন্ডিয়ান নিনো নামেও পরিচিত। বর্তমানে ভারত মহাসাগরে নিরপেক্ষ আইওডি চলছে।


তবে বৈশ্বিক আবহাওয়ার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস বলছে, আসন্ন বর্ষার দ্বিতীয়ার্ধে ভারত মহাসাগরে ইতিবাচক আইওডি দেখা দিতে পারে। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমবে, বাড়বে বৃষ্টিপাত। এদিকে উত্তর গোলার্ধের শীত ও বসন্তকালে তুষারপাতের সঙ্গেও দক্ষিণ এশিয়ার বৃষ্টিপাতের সরাসরি বিপরীতমুখী সম্পর্ক আছে। উত্তর গোলার্ধে তুষারপাত কম হলে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃষ্টি বেশি হয়। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে উত্তর গোলার্ধে তুষারপাত স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল।


সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট ফোরাম প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর সিলেট, বৃহত্তর কুমিল্লা, চট্টগ্রামের কিছু অংশ বাদে সারা বাংলাদেশেই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে রাজশাহী অঞ্চলে, বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকায়। এই সময়ে খুলনা অঞ্চল ছাড়া সারা দেশের তাপমাত্রা প্রায় স্বাভাবিক থাকবে। খুলনা অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকবে। ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের মধুপুর গড় অঞ্চলসহ বড় একটি অংশেও তাপমাত্রা কম থাকবে। তবে ঢাকা বিভাগের পদ্মার দক্ষিণ তীরের জেলাগুলোয় তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকতে পারে।


সম্মেলনে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লা নিনা কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর থাকে। এল নিনো স্থায়ী হয় এক থেকে দুই বছর। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়লে লা নিনায় পরিবর্তন আসতে পারে। এ কারণে জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, সামনের বছর তাপমাত্রা কম থাকবে। কারণ, বেশি বৃষ্টির পর হঠাৎ শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে তাপমাত্রা হুট করে বেড়ে যেতে পারে।


শেয়ার করুন