০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৭:৫৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
রংপুরের সিংহভাগ আসন দখলে নিতে চায় জাতীয় পার্টি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
রংপুরের সিংহভাগ আসন দখলে নিতে চায় জাতীয় পার্টি

বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ২২ আসনের মধ্যে এখন ছয়টিতে সংসদ-সদস্য রয়েছেন জাতীয় পার্টির। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্ত নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এ কারণে এ অঞ্চলে কতটা সুবিধা করতে পারবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা আর বিশ্লেষণ। সোমবার দলটি প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছে। এরপর থেকেই সরব হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-উল্লাস করেছেন তারা। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে সিংহভাগ আসন দখলে নিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে তারা নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছেন।


এদিকে অনেকে ধারণা করছেন, এবার রংপুরে জাতীয় পার্টির আসন বাড়বে। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অবশ্য এ সমীকরণ মানতে নারাজ। তারা মনে করছেন, জাতীয় পার্টি আগের অবস্থায় নেই। কার্যক্রমও নেই। ব্যক্তিনির্ভর দলে পরিণত হয়েছে। তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি ভালোবাসার কারণে এখনো দলের তৃণমূল পর্যায়ে অনুরাগ রয়েছে।


জানা যায়, রংপুর জেলায় ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছে চারটি এবং জাতীয় পার্টির দুটি।


রংপুর-১ গঙ্গাচড়া আসনের এমপি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি এবার ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম রাজু নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের ভাতিজা, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ-সদস্য ও জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিব এ আসনে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন। মূলত এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে তাকে।


রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ-সদস্য শিল্পপতি আনিছুল ইসলাম মন্ডল। এর বাইরেও প্রার্থী হবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুমনা আক্তার লিলি ও জাসদ (ইনু) জেলা সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান কুমারেশ রায়।


রংপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ-সদস্য এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ। এবার এ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল।


রংপুর-৪ আসনের সংসদ-সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রয়েছেন। গত নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। এবার হবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। দলের যুগ্ম মহাসচিব শিল্পপতি মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল এবার প্রার্থী হয়েছেন।


রংপুর-৫ আসনের সংসদ-সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান। সেখানে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মহানগর কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান আনিস। এ আসনে প্রার্থী হতে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জাকির হোসেন সরকার।


রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এখানে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব নুরে আলম যাদু। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। তিনি ছাড়াও সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল প্রার্থী হতে পারেন।


কুড়িগ্রাম জেলায় চারটি আসনের একটি জাতীয় পার্টির। আওয়ামী লীগের তিনটি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবার কুড়িগ্রামের একটি আসনও ছাড় দিতে চাইছেন না। তবে বিএনপি ভোটে না এলে সমীকরণ অন্য রকম হবে।


কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী-কচাকাটা) আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন সংসদ-সদস্য আওয়ামী লীগের আসলাম হোসেন সওদাগর। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি একেএম মোস্তাফিজুর রহমান।


কুড়িগ্রাম-২ (সদর-রাজারহাট ও ফুলবাড়ী) আসনের সংসদ-সদস্য জাতীয় পার্টির পনির উদ্দিন আহমেদ এবারও লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়বেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলী।


কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য আওয়ামী লীগের এমএ মতিনের পরিবর্তে নৌকা নিয়ে লড়বেন সৌমেন্দ প্রসাদ পান্ডে গবা। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন আব্দুস সোহবান। তবে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী-রাজিবপুর ও রৌমারী) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। তার পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব হাসান পলাশ। লালমনিরহাটে তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি আওয়ামী লীগের এমপি। লালমনিরহাট-৩ আসনটি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের।


লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বিপরীতে জাতীয় পার্টির হাবিবুল হক বসুনিয়া লড়াই করবেন।


লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির দোলোয়ার হোসেন লাঙ্গল নিয়ে লড়বেন। এছাড়া সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুজ্জামান মাহবুব স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।


লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সংসদ-সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের। এ আসনে তার পরিবর্তনে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেনকে মনোনীত করেছে দলটি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান।


গাইবান্ধায় পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাতে রয়েছে চারটি আসন।


গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবারও এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন প্রয়াত এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন আফরোজা বারী। গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের বর্তমান এমপি হুইপ মাহবুব আরা গিনি এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আব্দুর রশিদ সরকারের লড়াই হবে।


গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনের সংসদ-সদস্য কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঙ্গে লড়বেন জাতীয় পার্টির প্রয়াত এমপি ফজলে রাব্বীর ছেলে ময়নুর রাব্বী চৌধুরী। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আওয়ামী লীগের মফিজুল ইসলাম সরকার নির্বাচন করবেন।


গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তার বদলে সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ নৌকা নিয়ে লড়বেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন অধ্যক্ষ মশিউর রহমান।


গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে এবারও দলীয় প্রার্থী হয়েছেন সংসদ-সদস্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার।


নীলফামারীর চারটি আসনের মধ্যে তিনটিই আওয়ামী লীগের। একটি জাতীয় পার্টির।


নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন আহমেদ এবারও প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হয়েছে। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির লে. কর্নেল (অব.) তসলিম উদ্দিনের লড়াই হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেত্রী সরকার ফারহানা আক্তার সুমিসহ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।


নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ-সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে জাতীয় পার্টির শাহজাহান আলী চৌধুরী লড়বেন।


নীলফামারী-৩ (জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য জাতীয় পার্টির মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন সাবেক এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা।


নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ আংশিক) আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়বেন সংসদ-সদস্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগিনা আহসান আদেলুর রহমান আদেল। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন বাবুল প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনেও কয়েকজনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির জানান, রংপুরে জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। আসন্ন নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনেই জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে তারা।


রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনীমুখী দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই আগামী দিনে যে কোনো নির্বাচনে জোরদার ভূমিকা রাখবে।


শেয়ার করুন