০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনবদলির ঘোষণায় মাঠ প্রশাসনে অসন্তোষ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১২-২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনবদলির ঘোষণায় মাঠ প্রশাসনে অসন্তোষ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে মাঠ প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনতে চায়। এরই মধ্যে ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জের ডিসিকে বদলিও করা হয়েছে। এ ছাড়া একই স্থানে এক বছরের বেশি সময় থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ছয় মাসের বেশি একই থানায় থাকা ওসিদের তালিকা চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে। এতে মাঠ প্রশাসনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।


কয়েকজন ইউএনও এবং ওসি জানান, মাঠের এমন রদবদলে তাঁরা বিপাকে পড়বেন। অনেক কর্মকর্তার সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। কেউ কেউ অনেক তদবির করে সরকারি চাকুরে স্ত্রীকে নিজ কর্মস্থলের কাছে বদলি করে এনেছেন। বদলি ঠেকাতে ইসিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদবিরে নেমেছেন অনেকে। এ ছাড়া ওসিদের তালিকা চাওয়ার পর থেকে পুলিশের নানা মহলে তদবির শুরু হয়েছে। ভালো পদায়ন পাওয়ার জন্য কর্মকর্তারা পুলিশ সদর দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করছেন।


কেউ কেউ অবশ্য এই উদ্যোগে খুশি। তাঁরা বলছেন, কোনো কোনো কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একই থানায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন।তাঁদের বলয় থেকে এবার থানাগুলো মুক্ত হতে চলেছে। এর ফলে বঞ্চিত কর্মকর্তারাও থানার ওসি হওয়ার সুযোগ পাবেন।


বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনকালে ইসি যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেভাবে কাজ করব। বদলি চাকরির অংশ। এখানে মন খারাপ করার কিছু নেই।’


সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খানও বলেন, সরকারি কর্মচারীদের যেকোনো জায়গায় বদলি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটাই জনগণের প্রত্যাশা।     


জানা গেছে, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ছাড়াও বেশির ভাগ বামপন্থী দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। জাতীয় পার্টিসহ ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট দলগুলোর অংশগ্রহণে এই নির্বাচন মানুষের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলতে পারছে না।


তারপরও সরকার একটি ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে চায়। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ইসিও। গত ৩০ নভেম্বর জনপ্রশাসন সচিব ও জননিরাপত্তা সচিবকে লেখা চিঠিতে ইসি বলেছে, পর্যায়ক্রমে সব ইউএনও এবং ওসিকে বদলি করা হবে। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ইসি সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকেও (এসপি) তাৎক্ষণিক বদলি করা হবে। 


রংপুর বিভাগের একজন ইউএনও এবং ময়মনসিংহ বিভাগের একজন ওসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রদবদল করা হলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভোগান্তিতে পড়বেন। তাঁদের খরচ বাড়বে।


তবে মাঠ প্রশাসনের এমন রদবদলে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘এই নির্বাচন একতরফা হচ্ছে। একটি ভালো নির্বাচনের যে রকম পরিবেশ দরকার, তা নেই। মাঠ প্রশাসনে যে বদলির কথা বলা হচ্ছে, তাতে কোনো সুফল আনবে না। এ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে বলে মনে হচ্ছে না।’ 

আবু আলম মো. শহিদ খানও বলেন, ‘এই বদলির ফলে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। কারণ নির্বাচনে কার্যকর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। সুতরাং যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা ভাবা হচ্ছে, তার প্রয়োজন নেই।’


শেয়ার করুন