২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:০৩:৪০ অপরাহ্ন
ভোটের আগে দ্রব্যমূল্য কমানোর চেষ্টায় সরকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১২-২০২৩
ভোটের আগে  দ্রব্যমূল্য  কমানোর চেষ্টায় সরকার

কোভিড মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এমনিতেই দেশের মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। এর মধ্যে নতুন ‘অনুঘটক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধ। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে এসে মূল্যস্ফীতি কমাতে বিশেষ নজর দিতে হচ্ছে সরকারকে। এরই মধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে; বিশেষ করে খাদ্য সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।


খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরে গত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মতো প্রকল্পগুলোর আওতায় ১২ লাখ ৯২ হাজার টন চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল সাড়ে ১০ লাখ টন।


বেশি পরিমাণে বিতরণের কারণে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের খাদ্য মজুদ কমে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৪ টন। এক বছর আগে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৮২ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশে খাদ্য মজুদ ছিল গড়ে ১৮-১৯ লাখ টন। জানা গেছে, বেশ কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় খাদ্যশস্য বিতরণ দ্রুত বেড়েছে। এটি জুলাই থেকে নভেম্বরে ছিল এক লাখ ৬৪ হাজার টন। এক বছর আগে তা ছিল ২৭ হাজার ৬৫৮ টন।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চাপ সামলাতে রাজধানীর ৩০টি স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রির এই কার্যক্রম চলছে। প্রতি জায়গায় ৩০০ জনকে টোকেন দেওয়া হচ্ছে। তাদের কাছেই কেবল পণ্য বিক্রি করেন টিসিবির ডিলাররা। একেকজন ক্রেতা টিসিবির ট্রাক থেকে দুই কেজি করে মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজ এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ৭০ টাকায় এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।


চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা যায়, গত অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছিল ১০ লাখ ৫৫ হাজার টন। এর মধ্যে সরকারের আমদানি ছিল ছয় লাখ ৩৩ হাজার টন।


বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে এবং আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। বৈশ্বিক কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভীষণ দুঃসময় পার করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষকে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন, তাদের কথা বিবেচনা করে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষকে কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশে যে পরিমাণ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে তারচেয়েও বেশি মানুষকে সরকার ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করছে।


বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ঝুঁকি তৈরি করছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে কমে না। এর কারণ মুষ্টিমেয় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমদানি সীমাবদ্ধ থাকা। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্য ঠিক করলেও লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। আগে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেও এবার রাজনীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এবার নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে ভিন্ন একটি দেশের জড়ানো এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক অবস্থার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন এক সন্ধিক্ষণে। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াচ্ছে। রাজস্ব আহরণে কম প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।


শেয়ার করুন