বর্তমান সরকারের ২৩ মন্ত্রীর মধ্যে ২১ জনের সম্পদ বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। এর মধ্যে নয়জন মন্ত্রী আছেন, যাঁরা এই সময়ে প্রায় দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন। আর সম্পদ কমেছে মাত্র একজনের। এ ছাড়া ৮ মন্ত্রীর ব্যাংকে দায় ও ঋণ রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাঁদের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আইন অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার মাধ্যমে আটটি তথ্য দাখিল করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রার্থীর ব্যবসা ও পেশার বিবরণী, সম্ভাব্য আয়ের উৎস, নিজের ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী, কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার তথ্য। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রায় সব মন্ত্রীর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্পদ বেশি বেড়েছে এমন মন্ত্রীদের মধ্যে আছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।
হলফনামা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২১ মন্ত্রীর ২০১৮ সালে জমা দেওয়া তথ্যে মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকার বেশি। এবার নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।
পাঁচ বছর আগের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ সম্পদের মালিক হয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদ ৭২ কোটি টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৭ কোটি টাকা।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২২ কোটি টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ১১ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের মোট সম্পত্তি এখন প্রায় ১১৯ কোটি টাকা, যা গত সংসদ নির্বাচনের আগে ছিল ৪৭ কোটি টাকা।
পাঁচ বছরে ২৬ কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের। এর বাইরে আসাদুজ্জামান খান, দীপু মনি, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সাধনচন্দ্র মজুমদারের সম্পদ দ্বিগুণ বেড়েছে।
বেশির ভাগ মন্ত্রীর সম্পদ বাড়লেও কমেছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি সম্পদ কমেছে এই প্রভাবশালী মন্ত্রীর। তবে একই সময়ে তাঁর স্ত্রী দ্বিগুণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০১৮ সালে ৭০ কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও ২০২৩ সালে হলফনামায় ৪৪ কোটি টাকার সম্পদের হিসেবে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, হলফনামায় সম্পদের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেটি খণ্ডিত তথ্য। তাঁদের সম্পদ যে এর চেয়ে আরও বেশি, জনগণের সেরকমই ধারণা রয়েছে।
সম্পদের সঙ্গে বেড়েছে ঋণও
গত পাঁচ বছরে সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণও বেড়েছে অনেক মন্ত্রীর। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ঋণ ও দায় আছে এমন মন্ত্রীরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ২০১৮ সালে ঋণ ছিল প্রায় ৬ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটির বেশি টাকা। শিল্পমন্ত্রীর ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮ সালে তাঁর ঋণ ছিল ৫৭ লাখ টাকা, যা ২০২৩ সালে হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে সেগুলো যথার্থ কি না, বা এর বাইরেও কোনো সম্পদ আছে কি না, সেটা দেখার বিষয়। এখানে তিনটা প্রতিষ্ঠান যুক্ত। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দুদক অনুসন্ধান করতে পারে। আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এটা নিয়ে কাজ করতে পারে। আর নির্বাচন কমিশন সাহায্য নিতে পারে। কিন্তু সে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কেউ সেটা করছে না।