২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৬:৪১:৩২ পূর্বাহ্ন
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ, শেষ বেলায় আতঙ্কে অনেক প্রার্থী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৩
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ, শেষ বেলায় আতঙ্কে অনেক প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ। শেষ বেলায় এসে আতঙ্কে রয়েছেন সবাই। 


আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা দুই ধরনের আতঙ্কে রয়েছেন। একদিকে জোট, শরিক ও মিত্রদের কারণে বেশ কিছু আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের কপাল পুড়বে। যারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তারাও চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না।


কারণ বেশিরভাগ আসনেই তাদের বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে রয়েছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট ও শরিকদেরও মাথাব্যথার কারণ। 


আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন নানা শঙ্কায়। ভোটের মাঠ থেকে তাদের সরাতে বিভিন্ন মহল নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডই চায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাককু।


এসব নানা শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে আজকেই মিলবে ভোটের সব সমীকরণ এবং হিসাব-নিকাশ। নির্ধারণ হবে ভোটের মাঠে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন কারা। ইতোমধ্যে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সাতটি আসনে সমঝোতা করেছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে যাদের নৌকার প্রার্থী করা হয়েছিল তাদের আজকের মধ্যেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। 


এছাড়া আসন সমঝোতা নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। তাদের আসন ছাড়া হলে সেসব আসনের নৌকার প্রার্থীদেরও সরে দাঁড়াতে হবে নির্বাচন থেকে।


অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের ইতিবাচক অবস্থানের কারণে এবার ভোটের মাঠ ছাড়তে নারাজ তারা। ভোটে মাঠ থেকে তাদের সরাতেও চলছে নানা ধরনের চেষ্টা তদবির। যদিও আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট মাঠ থেকে না সরানোর বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। 

দলটির হাইকমান্ড থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে তারা ভোটের মাঠ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জোর করে উঠাবেন না। বরং শরিক এবং দল প্রার্থী সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জিতে আসতে হবে। ফলে আতঙ্ক রয়েছে নৌকা পাওয়া আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতাদের মধ্যেও।  


আওয়ামী লীগ যে ২৯৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তাদের সবাই শেষ পর্যন্ত  নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ, ইতোমধ্যে ১৪ দলের শরিক তিন দলের জন্য সাতটি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। 


শরিকদের ছাড়া আসনগুলো হলো-কুষ্টিয়া-২, লক্ষ্মীপুর-৪, বগুড়া-৪, বরিশাল-২, রাজশাহী-২, সাতক্ষীরা-১ এবং পিরোজপুর-৩। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ ছাড়া বাকি ছয়টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। 

এসব প্রার্থীদের আজকের মধ্যেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি আসনে ছাড়ের জোর দাবি রয়েছে ১৪ দলের শরিক দলের নেতাদের। তাদের দু-একটি দাবি মানলেও সেখানে নৌকার প্রার্থীর কপাল পুড়বে।


এছাড়া যাচাই-বাছাই ও আপিলে আওয়ামী লীগের ছয় জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি সমমনা দল আপাতত আলাদা প্রার্থী দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গেও আসন সমঝোতা হতে পারে। 


আলোচিত রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফও সরকারের সঙ্গে আসন সমঝোতা চায়। 

এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা ছাড়াও প্রার্থী হিসাবে পাঁচজন এবং বিএনএমের প্রার্থী হিসাবে ছয়জন সাবেক সংসদ-সদস্যও রয়েছেন। তাদের ছাড় দিলে এসব আসনেও নৌকার প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে হতে পারে।


ইতোমধ্যে ঝালকাঠি-১ আসনে দলের সাবেক সদস্য বিএইচ হারুনকে বাদ দিয়ে নতুন করে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। 


এছাড়া আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। তাদের সঙ্গে সমঝোতা হলে ওই আসনগুলোর নৌকার মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ফলে শরিক, মিত্র ও জোটের সমীকরণে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া চল্লিশেরও কাছাকাছি প্রার্থী দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন।


প্রার্থিতা প্রত্যাহারে নকল আবেদনের শঙ্কায় ডিসিকে চিঠি: এদিকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার ঘিরে অন্য ধরনের ঘটনাও ঘটছে। পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের স্বাক্ষর জাল করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য একটি চক্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। 


এই শঙ্কার কথা ইতোমধ্যেই লিখিতভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কার্যালয়, বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জানিয়েছেন। 


চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ৩ ডিসেম্বর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতা বৈধ বলে ঘোষণা করেন এবং তার প্রার্থিতা বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু পিরোজপুর-২ আসনের প্রতিপক্ষ গ্রুপ তার স্বাক্ষর জাল করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন (১৭ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন দাখিল করতে পারে বলে চিঠিতে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহিউদ্দিন মহারাজ। 


এ বিষয়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার সহযোগিতা কামনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি সশরীরে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তার পক্ষে কোনো ধরনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন বা অন্য কোনো আবেদন গ্রহণ না করতে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নানাভাবে চেষ্টা করেও ভোট থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে একটি চক্র দিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অপচেষ্টা করতে পারে বলে শঙ্কা মহিউদ্দিন মহারাজের। এ কারণেই তিনি চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছেন। 


তবে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানান, কোনো প্রার্থীর সাক্ষর জাল করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। যা হবে আরপিও আইন অনুসারেই হবে।


প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ: এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। মনোনয়নপত্র যাচাই ও আপিল নিষ্পত্তির পর প্রার্থী রয়েছেন দুই হাজার ২৬০ জন।  


এর মধ্যে কমিটি গঠন জটিলতায় গণতন্ত্রী পার্টির সকল প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 


বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনবিরোধী কর্মসূচি পালন করে আসছে। যদি সরকার ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটবিরোধী সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন কাল থেকে বন্ধ ঘোষণা করেছে।


প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। ওই দিন পর্যন্ত দেশের ৩০০ আসনে দুই হাজার ৭১৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাদের মনোনয়নপত্র ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। 


এতে এক হাজার ৯৮৫ জনের প্রার্থিতা বৈধ এবং ৭৩১ জনের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, বৈধ ও অবৈধ-দুই ধরনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা যায়। নির্বাচন কমিশনে ৫৬০টি আপিল জমা হয়। 


আপিলে বাতিল হওয়া ছয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে এবং নতুন করে ফিরে আসা ২৮০ জন যুক্ত করলে এ নির্বাচনে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ২৬০ জনে।


শেয়ার করুন