ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এখন পর্যন্ত তাদের নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেনি। জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি বৃহস্পতিবার ‘শন্তির জন্য পরিবর্তন’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে ২৪ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করে। শনিবার নির্বাচনি ইশতেহার দেয় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি ঘোষণা করবেন। এর আগের দিন ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করার কথা রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি দলগুলোর ইশতেহার কবে ঘোষণা হবে, নাকি আদৌ হবে না-এ নিয়েও সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই এসব দলের নেতাদের।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত ৪৪ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এসব দলের ১৫১৭ জন এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বলয়ের দলগুলোর বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৬৬, জাতীয় পার্টির ২৬৫ প্রার্থী রয়েছেন। সমঝোতার অংশ হিসাবে জাতীয় পার্টির ২৬টি আসনের বিপরীতে কোনো দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। একইভাবে শাসক দলটি তাদের তিন শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে তিনটি এবং জাতীয় পার্টি-জেপিকে একটিসহ ছয়টি আসনে ছাড় দিয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের শরিক তিনটি দলের ছয় প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ রাজনৈতিক দলের বাইরে নতুন নিবন্ধন পাওয়া তিনটি দল এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে তৃণমূল বিএনপি ১৩৪ আসনে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম ৫৪ আসনে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৭৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু নবগঠিন দলগুলো এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি তাদের নির্বাচনি ইশতেহার। কেন তারা নির্বাচনে যাচ্ছেন, নির্বাচনে জয়ী হয়েই বা কি করবেন, দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য ভাবনাটা কি, দেশ পরিচালনায় তাদের অঙ্গীকারই বা কি-তা জনগণকে কিছুই জানায়নি।
নিবন্ধিত অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৬৪, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২৯, গণফোরাম ৯, গণফ্রন্ট ২১, জাকের পার্টি ২১, জাতীয় পার্টি-জেপি ১৩, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১২২, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ১০, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৫, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৬, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৫, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩৮, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ৫, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ৪৫, বাংলাদেশ মুলিম লীগ ৪, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৬৩ এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া আর কেউই এখন পর্যন্ত তাদের দলের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেনি।
নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলোর কেন এ অনীহা এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছে তাদের বেশিরভাগই নীতি-আদর্শহীন নামসর্বস্ত, সাইনবোর্ডধারী এক নেতার দল। এদের দলীয় কার্যালয় নেই, কর্মী নেই, জনসমর্থন নেই। এরা নির্বাচন এলে জেগে ওঠে, বাকি সময় ঘুমিয়ে থাকে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এসব দলের প্রার্থীরা কাগজে-কলমে নির্বাচনে আছে, বাস্তবে এদের একজনও নির্বাচনি মাঠে নেই, নির্বাচনের প্রচারণায়ও নেই। তাই এদের কাছে নির্বাচনি ইশতেহার গুরুত্বপূর্ণ না। এদের কাছে নির্বাচনের নামে ব্যবসা করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়ুয়া শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনের আগেই ইশতেহার ঘোষণা করবেন। এ প্রসঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা শনিবার যুগান্তরকে জানান তিনি অসুস্থ। তাই ইশতেহার ঘোষণায় দেরি হচ্ছে। নির্বাচনের আগেই ইশতেহার প্রকাশ করা হবে বলে জানান হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা। শিগগিরই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে জানান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ইশতেহার ঘোষণা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই। এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও নেই। নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, দল টিকিয়ে রাখতে তারা ভোটে অংশ নিচ্ছেন। ফলাফল কি হবে-তাও তারা ভালোভাবেই জানেন। তাই আলাদাভাবে আয়োজন করে ইশতেহার ঘোষণায় তেমন আগ্রহ নেই তাদের।