দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট সম্পন্ন হলেও আন্দোলন অব্যহত রেখেছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসাবে দুই দিনের গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়েছে। ভোটে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঢাকাস্থ বিদেশি দূতাবাস ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে তুলে ধরবে।
জানা গেছে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন-তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট বর্জন করেছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের যে হার দেখিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতায় কোনো মিল নেই। আন্দোলনে জনগণের পুরোপুরি সমর্থন আছে তা ভোট বর্জনের মাধ্যমে তারা জানিয়ে দিয়েছেন। তাই আন্দোলন কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়া যাবে না। বৈঠকে দেড় মাসব্যাপী আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে সরকারের শপথ ও সংসদের প্রথম দিন হরতাল রাখার বিষয়েও মত দেন তারা। এখন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করা হবে।
এছাড়া বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জানান, প্রায় সব আসনেই ভোট কারচুপি করার তথ্য ইতোমধ্যে তারা পেয়েছেন। প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারাসহ নানা ধরনের কারচুপির অনেক ভিডিও পাওয়া গেছে। এসব ভিডিও আরও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর বাইরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যও নেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ওই বৈঠকে দুটি আসনের দুটি কেন্দ্রের রেজাল্ট শিট দেখিয়ে বলেন, সেখানে কেন্দ্রের মোট ভোটের চেয়ে ভোটকাস্ট বেশি দেখানো হয়েছে। কারচুপির এটিও একটি প্রমাণ।
শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। জনগণের সমর্থনে বিশ্বাস করে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, হঠকারী কোনো কর্মসূচি দিলে তা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত সরকার। সে সুযোগ তারা দেননি। যে কারণে সামনেও তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিতে থাকতে চান। হয়তো কোনো চাপে দেশি মিডিয়ায় ভোটের প্রকৃত চিত্র ও অনিয়ম প্রকাশ করতে পারেনি। কিন্তু বিদেশে গণমাধ্যমে সত্য তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এ ধরনের ভোটের বৈধতা দেবে না বলে তারা বিশ্বাস করেন। বিএনপি নেতারা বলেন, ভোট শেষ হলেও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন তারা। সমমনা দলগুলোও মনে করে, ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধের সূচনা হলো। দুই দিনের গণসংযোগ শেষে সরকার পতনের ‘একদফা’ দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মপন্থা দ্রুত ঠিক করা হবে। এক্ষেত্রে কালো পতাকা মিছিল বা সমাবেশের চিন্তা করা হচ্ছে। অথবা হরতালও অব্যাহত থাকতে পারে।
বিএনপির দাবি, তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোট বর্জন করেছে জনগণ। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সারা দেশে আজ ও কাল দুই দিনের লিফলেট বিতরণ করবে তারা।
‘প্রিয় ভোটার আপনাকে ধন্যবাদ’ শিরোনামে লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘৭ জানুয়ারি ফ্যাসিবাদী সরকারের সাজানো ও পাতানো ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ৭ জানুয়ারি সারা দেশে সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি সফল করেছেন। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে সফলভাবে অসহযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশে জনগণের কাছে ভোটাভুটি একটি রাজনৈতিক উৎসবের মতো। অথচ কথিত একটি জাতীয় নির্বাচনে ২১টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। এর অর্থ ইতিহাসের নজিরবিহীন ভোটারশূন্য সাত জানুয়ারি প্রকৃত অর্থে কোনো নির্বাচনই ছিল না। জাতীয় নির্বাচনের নামে বানরের পিঠা ভাগের মতো আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে জাতীয় সংসদের আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের ডামি নির্বাচন ঘৃণাভরে বর্জন করেছেন। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আপনাকে আবারও রক্তিম শুভেচ্ছা। বীরোচিত অভিনন্দন।’
লিফলেটে আরও বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বারো কোটি মানুষের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আপনি যে দল কিংবা যে মতেরই হোন, আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। আমাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিন। আপনার সাধ্য ও সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের চলমান আন্দোলনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার তথা প্রতিটি নাগরিকের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই চলমান আন্দোলন। চলমান সংগ্রাম-আন্দোলন সফল করতে হলে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘দেশের জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। সুতরাং চলমান আন্দোলন সফল করতে আপনাদের সক্রিয় সমর্থন এবং অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখুন। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতেই হবে। গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না, যেতে পারে না, যেতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফায়সালা হবে রাজপথে। গণতন্ত্রের বিজয় সুনিশ্চিত।’