প্রার্থী এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা এলাকা চষে বেড়ালেও ভোটারদের অনেকের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো আমেজ নেই। তাঁরা বলছেন, বিএনপি ছাড়া নির্বাচনকে নির্বাচন মনে হচ্ছে না। এমন অবস্থায়ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা রয়েছেন অস্বস্তিতে। তাঁদের স্বস্তি কেড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া দলীয় নেতারা। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামায় নৌকার প্রার্থীদের চিন্তা আরও বেড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন চিত্র লক্ষ্মীপুরে। সরেজমিনে জেলার চারটি আসনে ঘুরে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মূল লড়াইয়ের আভাসই পাওয়া গেল।
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আনোয়ার হোসেন খাঁন। জাতীয় পার্টিসহ আরও পাঁচ প্রার্থী থাকলেও তাঁর বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে হাবিবুর রহমান পবনকে। ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র এই প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগও দুই প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের মতে, ভোটার যা-ই আসুক, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ডা. আনোয়ার ও পবনের মধ্যে। এখন পর্যন্ত এই আসনে বড় কোনো সহিংসতা না হলেও ভোটের আগের ও পরের অবস্থা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ভোটারদের।
ডা. আনোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রয়েছে। জনগণ নৌকার পক্ষে ছিল সব সময়। এখনো আছে। ৭ জানুয়ারি সুন্দর একটি ভোটে নৌকার জয় হবেই।
হাবিবুর রহমান পবন অবশ্য বলেছেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাঁর গণসংযোগে বাধা দিচ্ছেন। ফলে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর উপজেলার একাংশ) আসনে নৌকার প্রার্থী নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। প্রায় এক ডজন প্রার্থীর মধ্যে তাঁর পথের কাঁটা মনে করা হচ্ছে সেলিনা ইসলামকে। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা সাবেক এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে সবাই থাকলেও ভেতরে ভেতরে বেশ কয়েকজন সেলিনার জন্যও কাজ করছেন।
তবে নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন নেই। সবাই আমার প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। নৌকার বিজয় আবারও হবে।’
সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘নৌকা প্রার্থীর লোকজন হুমকি দিচ্ছেন। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমি শঙ্কিত। ভোট সুষ্ঠু হলে জনগণ আমার পক্ষেই রায় দেবে।’
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকুর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সাত্তার। তবে এ নিয়ে ভাবছেন না গোলাম ফারুক। বললেন, দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে নেতা-কর্মীরা নেই। ভোটারদের কেন্দ্রে নেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ।
নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাঁর নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে এম এ সাত্তার বলেন, ‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছি। তাঁদের ছেড়ে যাব না।’
প্রার্থীরা জোরেশোরে মাঠে নামলেও ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মো. ইসমাইল বলেন, ‘গতবারও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ভোট শেষ।’ চায়ের দোকানি আফজাল মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনে আরও দল থাকলে বলতাম ভোট হবে।’
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনে নৌকার প্রার্থী ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) মোশাররফ হোসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন না। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। তাঁর মতে, এবার ভোটার কেন্দ্রে নেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ।
নৌকার প্রার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ নৌকার সঙ্গে বেইমানি করছে। তারপরও সমস্যা নেই। ভোটারদের ব্যাপক উৎসাহ পাচ্ছেন।
তবে কমলনগরের ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারলেই হয়। নির্বাচন দরকার নাই।’