গত কয়েকদিন ধরে রাত হলেই জেঁকে বসছে তীব্র শীত। রাতে হিমশীতল বাতাসে কাতর ছিন্নমূল হতদরিদ্র অসহায় মানুষ। রাতের আঁধারে উষ্ণতা নিয়ে নিম্ন আয়ের অসহায় শীতার্ত ভাসমান ছিন্নমূল মানুষের পাশে স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের উদ্যোগে নওগাঁর আত্রাইয়ে গড়ে তোল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা হাতে তুলে দিচ্ছে শীতবস্ত্র।
জানা যায়, তীব্র শীতে শীতার্ত মানুষদের উষ্ণতা দিতে রাতের আঁধারেই কম্বল নিয়ে ছুটে চলছেন সংগঠনের কর্মীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে দেখা মেলে সংগঠনটির উদ্যোক্তা আমানুল্লাহ ফারুক বাচ্চু, ডা. আশিষ কুমার, ডা. আতাউল হক, মোয়াজ্জেম মিঠু, রিমন মোর্শেদ, ডলার, চঞ্চল, রাকিব শুভসহ আরো অনেকের সাথে।
রাত হলেই ফুটপাত ও রেলওয়ে স্টেশনের বারান্দায় শুয়ে থাকা ভাসমান মানুষ ও শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন তারা। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এভাবে প্রতি রাতে ফেরিওয়ালার মতো উষ্ণ কম্বল বিতরণ করছেন সংগঠনটি।
প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে বেড়ান শীতার্তদের খুঁজে। পায়ে হেটে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুড়ে বেড়ান তারা।
রহিমা বেগম নামে এক বৃদ্ধা বলেন, বাড়িতে যেতে পারি না। নদী ভাঙনে বাড়ি চলে গেছে। দিনের বেলা এদিক সেদিক থাকি আর রাতে স্টেশনে ঘুমাই। কয়েক দিনের শীতে ঠিকমত ঘুমাতেও পাড়িনা আজ কম্বল পেয়ে আমি অনেক খুশি।
আকলিমা বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী স্বামী আর দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আমি আর আমার মেয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে যে অর্থ পাই তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। কাজ না থাকলে অনাহারে দিন কাটে। শীত এলে কষ্টের শেষ থাকেনা। কম্বলের অভাবে স্বামী আর ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক রাত জেগে কাটাতে হয়। এই কম্বল জড়িয়ে রাতে ভালভাবে ঘুমাতে পারবো।
কম্বল শরীরে জড়িয়ে রহমত আলী জানালেন, একবছর বয়সী ছেলে আর ছয়বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। পৌষের এই শীতে কম্বলের অভাবে রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়। কম্বল হাতে পেয়ে উৎচ্ছাসিত এই বৃদ্ধ।
ছায়াপথ সংগঠনের উদ্যোক্তা আমানুল্লাহ ফারুক বাচ্চু বলেন, শীতের শুরু থেকেই আমরা রাতের আঁধারে অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করে আসছি। পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষজন অনেক সময় কম্বলের অভাবে শীতে কষ্ট করে। তাই তাদেরকে একটু উষ্ণতা দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। রাত বা দিন বলে নয়, আমরা মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
ছায়াপথ সংগঠনের মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীতে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের কর্তব্য। আসুন ছায়াপথ সংগঠনের মতো আমরাও এগিয়ে আসি, তীব্র শীতে অসহায় মানুষের পাশে থাকি।