২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৪:১৭:৩০ অপরাহ্ন
ভারে-অবসরে চলছে চবি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৪
ভারে-অবসরে চলছে চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার চাকরি থেকে অবসরে গেছেন প্রায় তিন বছর আগে। এরপরও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারেরও একই অবস্থা। এই দুজনেরও চাকরির মেয়াদ নেই।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১৩টি দপ্তর দীর্ঘদিন ধরে চলছে চুক্তিভিত্তিক কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলছেন, অবসরপ্রাপ্ত-ভারপ্রাপ্তদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। 


নিয়মিত চাকরির বয়স পূর্তিতে ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল অবসর গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার। তবে নিয়োগপত্রে নির্ধারিত কোনো মেয়াদ না থাকায় অবসরের পরও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দের ক্ষেত্রে। ২০২১ সালের ৫ মে সহ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পান তিনি। নিয়োগের কয়েক মাস পর চাকরি থেকে অবসরে যান। তাঁর নিয়োগপত্রে চার বছর মেয়াদ উল্লেখ থাকায় তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবসরপ্রাপ্ত হলে জবাবদিহি করতে হয় না। তাই তাঁরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাঁদের যদি চাকরির মেয়াদ থাকত; পেনশন বা পাওনা আদায়ের বিষয় থাকত, তাহলে এতটা বেপরোয়া গতিতে দুর্নীতি-অনিয়ম চলত না বিশ্ববিদ্যালয়ে। 


এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতারকে কয়েকবার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি সাড়া দেননি। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে থাকা কে এম নুর আহমদ চাকরি থেকে অবসরে যান ২০২০ সালের ৩০ জুন। পরবর্তী সময়ে একজন শিক্ষককে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেজিস্ট্রার পদে আবার নিয়োগ পান কে এম নুর আহমদ। ওই সময় উপাচার্য বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, তিন মাসের মধ্যে পূর্ণকালীন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে বিজ্ঞপ্তি এখনো কার্যকর হয়নি। 


এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আসাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পূর্ণকালীন রেজিস্ট্রার নিয়োগ ও ভারপ্রাপ্তদের পদে পূর্ণকালীন কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশাসক প্রত্যাহারের জন্য আমরাও জোরালো ভূমিকা রাখব।’ 


যেসব দপ্তরের দায়িত্বে ভারপ্রাপ্তরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাব নিয়ামক, গ্রন্থাগারিক, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা, নিরাপত্তা দপ্তর, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর, শারীরিক শিক্ষা বিভাগ, কলেজ পরিদর্শক পদে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্তরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ও পরিবহন দপ্তরে কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব না দিয়ে প্রশাসক হিসেবে দুজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) সেল ও জাদুঘরের দায়িত্বেও শিক্ষক রাখা হয়েছে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) যে নির্দেশনা রয়েছে, তার কিছুই মানা হচ্ছে না। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালে ইউজিসি একটি নির্দেশনা দিয়েছিল সব বিশ্ববিদ্যালয়কে। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানের দেওয়া ওই চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), পরিচালকসহ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চলতি দায়িত্ব প্রদান না করে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এখনও এ নির্দেশনা আমলে নেয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 


সাবেক উপাচার্যরা যা বলছেন

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান ও অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মতে, এ পদগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অবসরপ্রাপ্তদের রাখা সমীচীন নয়। অধ্যাপক আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিত্র একই। এই পদগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অবসরপ্রাপ্তদের রাখা উচিত নয়। 


তবে শীর্ষ পদগুলোয় অবসরপ্রাপ্তদের রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দায় বেশি বলে মনে করেন অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন। তাঁর মতে, অবসর নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁদের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ থাকে না। কারণ তাঁরা তাঁদের পাওনা এর মধ্যেই বুঝে নেন। এঁদের চেয়ে সরকারের দায় বেশি। সরকার যাঁদের নিয়োগ দিচ্ছে, তাঁদের যোগ্যতা, দক্ষতা, বয়সসীমা ও সততা যদি যাছাই করা না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। এগুলো সরকারের নজরে আসা উচিত। 


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদগুলোয় অবসরপ্রাপ্ত ও ভারপ্রাপ্তদের থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নয়, অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’ 


শেয়ার করুন