ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ৭ জানুয়ারি পাঁচ বছরের শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য প্রশাসন। এ ঘটনার পর সারা দেশে অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাস্থ্য বিভাগের সব বিভাগীয় পরিচালক ও ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের তথ্য দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু সময় পার হলেও রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য এবং সিভিল সার্জনের কার্যালয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোনো তথ্য পাঠায়নি। জানা গেছে, রাজশাহীতে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এমনকি অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও তথ্য দিতে পারেনি বিভাগীয় পরিচালক এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকৃতপক্ষে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কিত তথ্য তারা সংরক্ষণ করেন না। এসব তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেই থাকে। সেই তথ্যই তারা ব্যবহার করেন। তবে ওয়েবসাইটে কিছুদিন থেকে সমস্যা হওয়ায় তারা বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তথ্য দিতে পারছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের দিকে নজরদারি না থাকায় তৈরি হয়েছে চরম অরাজকতা। ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। তবে জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার তথ্য মতে, মহানগরীতে মোট ১২০টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে। ১৮টি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের আবেদন করেছে। তবে জেলার নয়টি উপজেলায় কতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সে ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেনি। অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি ডা. আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানই শুধু নয়, অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ন্যূনতম নজরদারি নেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রেও তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ৪৩৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সে সময় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ আদেশও পালন হয়নি। রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) আনোয়ারুল কবীর বলেন, ২০২০ সালে এক হাজার ৪৩৮টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকার কথা নয়। কারণ প্রায়ই অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এবারও বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। নিয়ম না মানলে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রাজশাহীতে কোনো অবৈধ বা অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হালনাগাদ তথ্য নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আশা করছি, এ তালিকা রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠাতে পারব।