০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৪:৩২:০৮ অপরাহ্ন
এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের রাজনীতি মানা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০১-২০২৪
এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের রাজনীতি মানা

বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য চাকরিবিধি হচ্ছে। এর খসড়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ, চাঁদা ও সমর্থন নিষিদ্ধ করে বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংসদ সদস্য বা বেসরকারি কোনো ব্যক্তির কাছে যেতে পারবেন না।


 


বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাকরিবিধির এই খসড়া করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। খসড়ায় অনুমোদন ছাড়া প্রাইভেট টিউশন নিষিদ্ধের কথাও বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, চাকরিবিধি হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা উপকৃত হবেন।


 


তবে শিক্ষকনেতাদের অনেকে বলছেন, রাজনীতি করার অধিকার না থাকলে তা হবে ইউনেসকো ও আইএলও সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

এমপিওভুক্তদের চাকরিবিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব সরকার। শিক্ষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন—এ রকম কোনো পদক্ষেপ নেবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


এমপিও হলো ‘মান্থলি পে-অর্ডার’ বা মাসিক বেতন আদেশ, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে মূল বেতন ও কিছু ভাতা পান সরকার থেকে।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, সর্বশেষ জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারীদের মতো একটি বিধিমালা তৈরির প্রস্তাব দেন ঝিনাইদহের তৎকালীন ডিসি মনিরা বেগম। এরপর বিধিমালা তৈরির কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. রবিউল ইসলাম গত সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা উন্নত করার উদ্দেশ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য চাকরিবিধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা উপকৃত হবেন। বিষয়টি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি কর্মশালা হওয়ার কথা রয়েছে। কর্মশালা থেকে আসা প্রয়োজনীয় সুপারিশ খসড়া বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর চূড়ান্ত করে বিধিমালাটি জারি করা হবে।


বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৬৪ টি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ ২০ হাজার ৪৩৭ টি, বাকিগুলো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন সাড়ে ৫ লাখের মতো।


জানা গেছে, খসড়া বিধিমালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলা শিরোনামে ১০টি বিধি রয়েছে। এর একটিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন না, এর সাহায্যে চাঁদা দেওয়া বা অন্য কোনো উপায়ে এর সহায়তা করবেন না এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে নিজেকে জড়িত করবেন না।’ আরেক বিধিতে আছে, কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না।


প্রবীণ শিক্ষকনেতা কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ইউনেসকো ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সনদ স্বাক্ষরকারী দেশ। সেখানে শিক্ষকদের রাজনীতি করার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং আমাদের এমন কিছু করা যাবে না, যাতে এ দুই সংস্থার সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।’


খসড়া চাকরিবিধিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক নিজ নামে প্রকাশিত কোনো লেখায় অথবা জনসমক্ষে দেওয়া বক্তব্যে অথবা পত্রিকায় এমন কোনো বিবৃতি বা মতামত প্রকাশ করতে পারবেন না, যা সরকারকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে, এমন বিতর্কিত ধর্মীয় বিষয়ে অংশগ্রহণ না করতেও বলা হয়েছে।


খসড়ায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন বা অন্য যেকোনো নিয়োগ নিষিদ্ধের কথাও বলা হয়েছে। অদক্ষতা, পেশাগত অসদাচরণ, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে তাও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। শাস্তির মধ্যে রয়েছে তিরস্কার, ইনক্রিমেন্ট স্থগিত, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত ইত্যাদি।


এ ছাড়া খসড়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বিমা কোম্পানির এজেন্ট, কোনো ব্যবসা বা খণ্ডকালীন কাজে যুক্ত না হতে এবং অভ্যাসগত ঋণগ্রস্ততা পরিহার করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সংবাদপত্র বা কোনো গণমাধ্যমে যোগাযোগ এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যম ছাড়া ব্যক্তিগত বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন