২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৪:৩৬:৪২ অপরাহ্ন
দেশে ঢুকছে কোকেনসহ নতুন ছয় মাদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৪
দেশে ঢুকছে কোকেনসহ নতুন ছয় মাদক

কোকেনসহ নতুন ছয় ধরনের মাদকদ্রব্য বিদেশ থেকে দেশে নিয়মিত ঢুকেছে। পাচার হয়ে দেশে ঢোকা অন্যান্য মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে খাত, আইস পিল (এনপিএস), ক্রিস্টাল, এমডিএমএ ও অ্যামফিটামিন। এসব মাদকদ্রব্য ভুয়া ঘোষণায় এনে বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।


দেশে কোকেনসহ নতুন ছয় মাদকডিএনসির মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পরিদর্শক দেওয়ান মো. জিল্লুর রহমান জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১০০ কোটি টাকার কোকেন জব্দের ঘটনায় করা মামলায় তিন আফ্রিকান নাগরিকসহ পাঁচজনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তারের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


আসামিরা হলেন নমথেনদাজো তাওয়েরা সোকো, নমসো ইজেমা পিটার ওরফে অস্কার, নডোলি ইবুকা স্ট্যানলি ওরফে পদস্কি, সাইফুল ইসলাম রনি ও আসাদুজ্জামান আপেল। তাঁদের মধ্যে আসামি সোকোর ছয় দিন ও অন্য চারজনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।


আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মাদক পাচারে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব মাদকদ্রব্য আকাশপথে এনে স্থলপথে বেশি পাচার করা হচ্ছে।


ডিএনসি সূত্র বলছে, কুরিয়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন লাগেজের মাধ্যমে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থলপথে চলছে এই মাদক পাচার।


মাদক পাচার রোধে চার বছর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) মাদক শনাক্তকরণে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে স্ক্যানার বসানোর উদ্যোগ নিলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।


এমনকি ডগ স্কোয়াড তৈরির প্রস্তাব করা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ডিএনসির মাদক উদ্ধার তত্পরতা বাড়বে। এতে সাফল্যও আসবে। 


ডিএনসি কর্মকর্তা বলেন, কোকেন পাচারে আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত। এর মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছে।


সীমান্তের জুতসই স্থান খুঁজে ওই পথে কোকেন পাচার করছে। তিনি বলেন, বিদেশি চক্রের শীর্ষ আরো পাঁচ মাদক ব্যবসায়ীকে খুঁজছে ডিএনসি। এর মধ্যে জ্যাকব ফ্রাংকি ওরফে ডন ফ্রাংকি নামের একজন নাইজেরিয়ায় বসে কোকেন পাচারে বাংলাদেশে কলকাঠি নাড়ছেন।

ডিএনসি সূত্র জানায়, এই চক্রে একাধিক নাইজেরীয় নাগরিকসহ দেশি-বিদেশি আরো মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সহযোগী নিয়োগ করেছেন। এসব সহযোগী সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচারে জুতসই পথ খুঁজে পেতে সহযোগিতা করেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন পাচারকারী দেশি-বিদেশি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।


দেশে পাঁচ বছরে নতুন মাদকের ১৫ চালান


ডিএনসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি একাধিক অভিযানে কোকেন পাচারের অভিযোগে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছেন ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েং (৪২), নাইজেরিয়ার নাগরিক ননসো ইজেমা পিটার ওরফে অস্কার (৩০) ও নুডুলে ইবুকা স্ট্যানলি ওরফে পোডস্কি (৩১), বাংলাদেশি নাগরিক সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি (৩৪) ও আসাদুজ্জামান আপেল (২৭)।


এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ মালাউয়ির নাগরিক নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকোকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে ২০০ গ্রাম কোকেনসহ তানজানিয়ার নাগরিক মোহাম্মেদ আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএনসির তথ্য মতে, কোকোনের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় এই চালানটি মালাউয়ি থেকে ইথিওপিয়া ও দোহা হয়ে বাংলাদেশে আসে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত পাঁচ বছরে দেশে ১৫টি কোকেনের চালান ঢুকেছে। এর মধ্যে গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে কোকেনের আরো দুটি বড় চালান বাংলাদেশ হয়ে সীমান্ত দিয়ে পাশের দেশে চলে গেছে। ওই চালানগুলো নিয়ে আসেন ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েংগি ও মালাউয়ের নাগরিক নোমথানডাজো তোয়েরা সোকো। নাইজেরিয়ায় অবস্থানরত জ্যাকব ফ্রাংকির নির্দেশে অন অ্যারাইভাল ভিসায় তাঁরা বাংলাদেশে আসেন।


ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, এই চক্রের বিষয়ে তাঁরা আরো খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এই চক্রের প্রধান হলেন ডন ফ্রাংকি। ৯ মাস আগে তিনি বাংলাদেশ ছাড়লেও নাইজেরিয়ায় বসে মাদক ব্যবসার সমন্বয় করছেন।


শেয়ার করুন