২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:০৫:০৬ অপরাহ্ন
পাড় ভেঙে তলিয়েছে ১০০ একরের ফসল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০২-২০২৪
পাড় ভেঙে তলিয়েছে ১০০ একরের ফসল

তিস্তা সেচ প্রকল্পের রংপুর ক্যানেল ভেঙে তলিয়ে গেছে একশ একর জমির ফসল। এতে তামাক ও আলুর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে ক্যানেলের প্রধান খালের উৎসমুখে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় জমে থাকা পানি কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী ক্ষতি পূরণের দাবি জানিয়েছেন। বুধবার দুপুরে রংপুর সদরের মমিনপুর ইউনিয়নের জানপুর মুন্সিরহাট ক্যানেলের পশ্চিম অংশের প্রায় ৫০ ফুট ভেঙে আশপাশের প্রায় ১০০ একর জমির ফসল তলিয়ে যায়।


রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, তিস্তায় পানিপ্রবাহ কম থাকায় ব্যারাজের সব গেট বন্ধ করে ১৩ জানুয়ারি থেকে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ কারণে সেচ ক্যানেলগুলো পানিতে টইটম্বুর ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সংস্কার করায় জানপুর মুন্সিরহাট এলাকায় ক্যানেলের নিচের অংশের মাটি নরম থাকাসহ ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পানির প্রবাহ হওয়ায় পাড়ের প্রায় ৫০ ফুট এলাকা ভেঙে যায়। এতে ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। কারণ পানি নিচের দিকে সরে যাওয়ায় পানি দ্রুত কমে গেছে। এই ভাঙনের খবর পাওয়ার পরই তিস্তার পানি সরবরাহের প্রধান খালের উৎসমুখে পানি সরবরাহ বন্ধ কর দেওয়াও হয়। ফলে আর কোনো ফসলি জমি তলিয়ে যায়নি। এই খালের ভাঙন মেরামতের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভাঙন মেরামত করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।


শুক্রবার জানপুর মুন্সিরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, উজানে পানিপ্রবাহ বন্ধ রাখায় ক্যানেলে পানি নেই। পার্শ্ববর্তী অনেক ফসলের জমি থেকেও পানি সরে যেতে শুরু করেছে। তবুও গম, ভুট্টা, আলু ও তামাকের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের মতে পানি দ্রুত সরে গেলে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।


এলাকার লোকজনের দাবি, পাউবোর খামখেয়ালিপনার কারণে তাদের এত বড় ক্ষতি হলো। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হচ্ছে জেনেও পাউবো সময়মতো ক্যানেলের পাড় সংস্কার করেনি। তাই ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যানেলের ভাঙা অংশ সংস্কারের কাজ করতে দেওয়া হবে না। পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়া অংশের ভাটাতে খারুভাঁজ নদীর ওপর একটি ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে।


মমিনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেনহাজুল ইসলাম বলেন, আসলেই কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কারণ ক্যানেলের ভাঙা অংশ দ্রুত সংস্কার না হলে বোরো ধানের সেচে ব্যাঘাত ঘটবে।


রংপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, জানপুর মুন্সিরহাট এলাকায় অন্তত ২৫ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি পানি দু’একদিনের মধ্যে সরে যায়, তা হলে কোনো ক্ষতি হবে না। শুক্রবার পর্যন্ত দেখা গেছে, এখন আর খেতে পানি নেই।


রংপুর পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মহিবুল ইসলাম বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের পাড় ভেঙে যাওয়া কারও গাফিলতি নয়। এমনিতে মাটির ক্যানেল, তার ওপর ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাড়ের প্রায় ৫০ ফুট এলাকা ভেঙে যায়। এখন ক্যানেলের শুরু নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের রাজিব এলাকায় পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্লাবিত এলাকার পানি নেমে গেছে। তবে সব প্রস্তুতি থাকার পরও ক্ষতিপূরণের দাবিতে উত্তেজিত লোকজনের বাধার মুখে ক্যানেল প্রাথমিক সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ক্যানেল সংস্কার করতে না পারলে বোরো খেতে সেচ প্রদানে ব্যাঘাত ঘটবে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ক্যানেল সংস্কার করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।


শেয়ার করুন