২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:২২:১০ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিধি নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনের কর্মকর্তারা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিধি নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনের কর্মকর্তারা

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি কিছু নাগরিকের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বা পরিধির বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন এর আওতায় পড়বে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা।


বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনকালে যেসব জেলা প্রশাসক (ডিসি) রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরাই বেশি উদ্বিগ্ন। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে। 


২০১৮ সালের নির্বাচনে একটি বড় জেলার ডিসি ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি আগের দুটি নির্বাচনকে আমলে নিয়ে ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু করে, তাহলে বর্তমান প্রশাসনের অনেকে ঝামেলায় পড়তে পারেন। বিশেষ করে যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াতের প্রয়োজন আছে, তাঁদের অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই কর্মকর্তারা আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ২২ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। যাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাঁদের বিষয়ে বলা হয়, তাঁরা বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য। যাঁদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে, সেসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। এর আগে ২৫ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।


জানা গেছে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, এমন কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। তবে মাঠ প্রশাসনের যাঁরা রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই চাকরিতে আছেন। কেউ কেউ অবসরে গেলেও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিতে আছেন। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসকদের অনেকে বর্তমানে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে আছেন। অনেকে বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত। কেউ কেউ অবসরেও গেছেন। ওই সময়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ইউএনওরা এখন উপসচিব কিংবা ডিসি হিসেবে কর্মরত। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ডিসিরাই থাকবেন রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে। 

২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মকর্তা জানান, ‘নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। তখন তো ভাবিনি, এমন একটি বিষয় সামনে আসবে। চাকরির শেষ সময়ে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হব, তা কল্পনায়ও ছিল না। দেখা যাক কী হয়!’


জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেসব ডিসি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁরা এখন যুগ্ম সচিব। তাঁদের প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরত। কেউ কেউ বিভাগীয় কমিশনারও হয়েছেন। সেই নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী ইউএনওদের কয়েকজন উপসচিব হলেও বেশির ভাগই সিনিয়র সহকারী সচিব পদে আছেন। কেউ কেউ কয়েকটি জেলায় এডিসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।


এ প্রসঙ্গে সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিষয় এখনো পরিষ্কার না। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ভিত্তি হিসেবে ধরবে কি না, তা কিন্তু ক্লিয়ার না। তারা বলেছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের ওপর প্রয়োগ করা হতে পারে। ফলে অতীতে যাঁরা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের মধ্যে এ ধরনের চিন্তা আসাটা অমূলক নয়।’


শেয়ার করুন