২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৩০:৩১ অপরাহ্ন
পদ্মা সেতু দিয়ে শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল, উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১০-২০২৩
পদ্মা সেতু দিয়ে শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল, উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চল

স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে সড়ক চলাচলের পর এবার শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল। আগামী ১ নভেম্বর খুলনা থেকে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও পরদিন ২ নভেম্বর বেনাপোল থেকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে। সেইসঙ্গে খুলছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ভাগ্যের চাকা। এ অবস্থায় অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন এই অঞ্চলের মানুষজন। সবার মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। ট্রেনে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে উচ্ছ্বসিত তারা। 


সেতু চালু হওয়ায় ইতোমধ্যে বদলে গেছে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থা। আগে বেনাপোল থেকে দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকা যেতে পণ্যবাহী ট্রাকের সময় লাগতো এক থেকে দুই দিন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় যাচ্ছে চার-পাঁচ ঘণ্টায়। একই সময়ে ঢাকা থেকে বেনাপোল পৌঁছাচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। যাত্রী পরিবহনে এসেছে পরিবর্তন। যাত্রীবাহী বাসে বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছাতে আগে সময় লাগতো আট থেকে ১৫ ঘণ্টা। এখন চার-পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় যাচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে সময় যেমন বাঁচছে তেমনি এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় গতি এসেছে। 


রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু হয়ে আগামী ১ নভেম্বর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি খুলনা ছাড়বে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং ঢাকা পৌঁছাবে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে দৌলতপুর, নোয়াপাড়া, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থামবে। পরদিন অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে ‘বেনোপোল এক্সপ্রেস’। ওই দিন ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। 


খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘আগামী ১ নভেম্বর থেকে নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। নতুন এই রুটে যাত্রীদের আগ্রহও বেশি। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় ট্রেনে যাত্রা করার জন্য খোঁজ নিতে শুরু করেছেন যাত্রীরা।’


স্থানীয় বাসিন্দা ও বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেনাপোলের সঙ্গে যশোর হয়ে ট্রেন যোগাযোগ চালু হলে পরিবহনের অগ্রযাত্রার সঙ্গে যোগ হবে আরেকটি নতুন অধ্যায়। যশোরের চেঙ্গুটিয়া থেকে নড়াইল পর্যন্ত রেলসড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন। সম্পূর্ণ রেলপথ নির্মাণ না হওয়ায় বিকল্প পথে অর্থ্যাৎ মাওয়া থেকে ফরিদপুর-রাজবাড়ী-পোড়াদহ হয়ে ট্রেন যাবে যশোর। বেনাপোল থেকে ঢাকা যাবে একই পথে। আপাতত পোড়াদহ হয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় একটু বেশি লাগবে। তবে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকার রেল যোগাযোগ চালু হলে বদলে যাবে বন্দরের চিত্র। তখন সময় আরও কম লাগবে, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।


বেনাপোলের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিনির্ভর যশোর অঞ্চলের কৃষিখাত আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। যশোর-সাতক্ষীরা অঞ্চলের মাছের পাশাপাশি গদখালী ও ঝিকরগাছার ফুল, বিভিন্ন ধরনের সবজি, নারিকেল ও কাঁঠালসহ কৃষিপণ্য সহজে পৌঁছে যাবে ঢাকায়। দ্রুত কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছালে এই অঞ্চলের কৃষকরা উপকৃত হবেন।’


বেনাপোলের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ‘বাসে সেতু দিয়ে যাতায়াত করেছি। যানজট না থাকলে সময় লাগে চার ঘণ্টা আর যানজট থাকলে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। এখন ট্রেনে যাতায়াতের অপেক্ষায় আছি। আসলে পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে গেছে।’


পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে গার্মেন্টসহ রফতানি পণ্য পরিবহনে অধিক সুবিধা হয়েছে বলে জানালেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ শামছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রেল যোগাযোগ চালু হলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি আরও বাড়বে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় গত এক বছরে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বেড়েছে দ্বিগুণ। ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি কম খরচে মালামাল বহন করা যাবে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন শাকসবজি, ফুল ও মাছ দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছানো গেলে উপকৃত হবেন লাখ লাখ কৃষক। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রা।’ 


আগামী ২ নভেম্বর থেকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেন নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আব্দুল আওয়াল। তিনি বলেন, ‘ওই দিন ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। উভয় পথে ঝিকরগাছা, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, দর্শনা হল্ট, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে ট্রেনটি। এজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।’


শেয়ার করুন