২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:৫০:৪২ পূর্বাহ্ন
যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে পাকিস্তানের নতুন সরকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৪
যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে পাকিস্তানের নতুন সরকার

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে যে সরকারই পাকিস্তানের হাল ধরুক না কেন, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা সামাল দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে৷ অপ্রিয় সংস্কার, বাড়তি কর ও রাজস্ব আদায় জনরোষের কারণ হতে পারে৷


করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধসহ একাধিক সংকটের কারণে বিশ্বের অনেক প্রান্তে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের দুর্দশাও বেড়েছে৷ কিন্তু পাকিস্তানের মতো করুণ পরিস্থিতি খুব বেশি জায়গায় দেখা যাচ্ছে না৷ দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি৷ সরকারি হিসাবেই প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে৷ 


রাষ্ট্রীয় ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ৭২ শতাংশ ছুঁয়েছে৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কমার পর মার্কিন ডলারের সঙ্গে পাকিস্তানের মুদ্রার বিনিময় মূল্যের অস্বাভাবিক উঠানামার কারণে আমদানির সমস্যা রয়েছে৷ তার উপর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা সেই পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে৷ আপাতত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের জরুরি ঋণ সম্বল করে পাকিস্তান কোনোরকমে টিকে রয়েছে৷


সাধারণ নির্বাচনের পর শেষ পর্যন্ত যে সরকারই পাকিস্তানের হাল ধরুক না কেন, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা সামাল দেওয়া তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে অপেক্ষা করছে৷ তবে অন্যান্য যে কোনো নীতির মতো অর্থনীতির প্রশ্নেও সামরিক বাহিনীর সম্মতি ছাড়া নতুন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এক পা ফেলা সম্ভব হবে না৷ 


তার উপর একদিকে মরিয়া জনগণ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলির সংস্কারের চাপ সামলে বাজারের আস্থা অর্জন করাও পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য কঠিন কাজ হবে৷ প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে উত্তেজনা ও স্থিতিশীলতার অভাবের কারণে পাকিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগ এমনিতেই কমে চলেছে৷ শুধু চীনের কৌশলগত সহায়তার উপর নির্ভরতা আরও বেড়ে গেছে৷


গত বছরের জুন মাসে আইএমএফ পাকিস্তানকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিলেও সে দেশকে বেশ কিছু অপ্রিয় সংস্কার চালাতে বাধ্য করেছিল৷ ১৯৫৮ সাল থেকে এই নিয়ে ২৩ বার পাকিস্তানকে এমন সহায়তা দিতে হয়েছে৷ সর্বশেষ সহায়তার পূর্বশর্ত হিসেবে সরকারকে বিদ্যুতের উপর বাড়তি কর চাপাতে হয়েছে, ভর্তুকি কমাতে হয়েছে৷ বিপুল বিদ্যুৎ ঘাটতির মাঝে এমন পদক্ষেপ ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি করেছে৷ নতুন সরকার আরও ঋণ চাইলে অন্যান্য ক্ষেত্রেও অপ্রিয় সংস্কার চালাতে বাধ্য হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে কর ও রাজস্ব আদায়ের দুর্বল অবকাঠামো শক্তিশালী করে দেশের মধ্যে রাষ্ট্রের আয় বাড়ানোর জন্য চাপ বাড়ছে৷ 


বলা বাহুল্য, কঠিন পরিস্থিতিতে করের বাড়তি বোঝা পাকিস্তানের অনেক মানুষের জীবন আরও দুর্বিসহ করে তুলতে পারে৷ বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এমন চাপ প্রতিরোধের চেষ্টা করতে পারেন৷ পাকিস্তানের একাধিক সরকার এতকাল এমন সব অপ্রিয় পদক্ষেপ এড়িয়ে গেছে৷ নতুন সরকারের পক্ষে সেটা আর সম্ভব নাও হতে পারে৷


এমন প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনীর সমর্থন পেলেও পাকিস্তানের নতুন সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পিটিআই দলকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জন্য যে সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে-বিদেশে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে৷ 


সেনাপ্রধান জেনালের আসিম মুনির নতুন সরকারেরও নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়বেন, সে বিষয়ে তেমন সন্দেহ নেই৷ পরমাণু শক্তিধর দেশটিতে এমন লাগাতার সংকট তাই বিশ্বের কাছে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে থাকতে পারে৷


শেয়ার করুন