২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন
প্রতারিত হবে না ক্রেতা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০২-২০২৪
প্রতারিত হবে না ক্রেতা

করপোরেট প্রতিষ্ঠান শুধু সুগন্ধি চাল বিক্রি করতে পারবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতো চালের বস্তায় মিলগেটের বিক্রি মূল্য লেখা থাকতে হবে। একই সঙ্গে বস্তার গায়ে উল্লেখ থাকতে হবে ধানের জাত ও উৎপাদনের তারিখ। পুষ্টি নিশ্চিতে নির্ধারিত পরিমাণের বেশি ছাঁটাই করা যাবে না। ধানের যৌক্তিক উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ সব বিধান রেখে শীঘ্রই পরিপত্র জারি করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, চালের বাজার যৌক্তিক পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখতে প্রাথমিকভাবে বেশকিছু খসড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রস্তাব আকারে খসড়া সিদ্ধান্তগুলো আলোচনা হয়। এটি খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করছে। যাচাই-বাছাই শেষে আবারও একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। পরে এটি পরিপত্র আকারে জারি করা হবে।


সূত্র জানায়, প্রতি বছর মৌসুমে কী পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে, প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ কত কৃষি মন্ত্রণালয় তা জানিয়ে দেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। খাদ্য মন্ত্রণালয় কৃষকের লাভ ধরে ধানের দাম নির্ধারণ করে দেবে। নির্ধারিত ধানের মূল্যের ওপর যৌক্তিক পর্যায়ের লাভ ধরে মিলগেটের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। মিলগেটের যৌক্তিকমূল্য নির্ধারণ করার পর ধাপে ধাপে নির্ধারিত পরিমাণ লাভ ধরে চাল বিক্রি হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। এতে কে কোন পর্যায়ে কত টাকা করে লাভ করবে তাও সুনির্দিষ্ট হয়ে যাবে।


একই সঙ্গে চালের বস্তায় ধানের জাত উল্লেখ থাকায় কেউ ইচ্ছামতো ভিন্ন ভিন্ন নামে চাল বিক্রি করতে পারবে না। এতে ক্রেতা প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাবেন। পোলিশের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কেউ অতিরিক্ত ছাঁটাই করে চাল চিকন করতে পারবে না। এতে চালের পুষ্টিগুণও ঠিক থাকবে।


এ ছাড়া গম আমদানি করার পর তারও দাম নির্ধারণ করে দেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। অন্য যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হবে তার খরচ বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ লাভ দিয়ে তার মূল্য নির্ধারণ করে দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখবে সরকার।


করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চালের ব্যবসায় নেমেছে। তারা বাজার থেকে অতিরিক্ত দামে ধান কেনে। ধান যে দামেই কিনুক না কেন, তাতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। ওই দামের ওপর নির্ধারণ করে চালের উৎপাদন খরচের চেয়ে ১৪/১৫ টাকা বেশি ধরে প্যাকেটজাত করে সুপারশপে তা বিক্রি করে। এদের এ জাতীয় কর্মকান্ডে দেশে ধানের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। যে কারণে তাদের মোটা চাল বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। তারা শুধু সুগন্ধি চাল বিক্রি করতে পারবে।


মঙ্গলবার বিকেলে খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মিনিকেট নামে যেহেতু কোনো ধান নেই, সেহেতু বাজারে এ নামে কোনো চাল থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একসঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছি। কৃষি মন্ত্রণালয় আউশ, আমন এবং বোরো- এই তিন মৌসুমে কোন জেলায় কোন জাতের কী পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে তা জানাবে। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় তথ্যগুলো খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। ধানের উৎপাদন খরচ কত এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কত তাও জানাবে মন্ত্রণালয়টি। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল ও গমের বাজারদর নির্ধারণ করে দেবে।


সাধন চন্দ্র বলেন, এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে। কোন কোন পণ্য আমদানি করা প্রয়োজন তা জানাবে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দেবে এবং আমদানি পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। সরকার-নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কেউ কেনাবেচা করলে কৃষি বিপণন আইন, ভোক্তা অধিকার আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করবে। আমরা মাঠে নেমেছি, আছি এবং থাকব। এই তিন মন্ত্রণালয় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কাজ করবে।


বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, দেশের কোন জেলায় কোন পণ্য কী পরিমাণ উৎপাদন হয় এবং উৎপাদন খরচ কত সে তথ্য সংগ্রহ করবে সরকার। এরপর জেলায় জেলায় সরবরাহে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কত হতে পারে তা নির্ধারণ করে প্রকাশ করা হবে। সরকার-নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কেনাবেচা করা যাবে না। প্রতিটি পণ্যের প্যাকেটে উৎপাদনের তারিখ, উৎপাদন খরচ, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সংযোজন করা হবে।


তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক চিনি, তেল ও খেজুরের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দু-একদিনের মধ্যে মূল্য নির্ধারণ করে প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও জানান, এই তিন মন্ত্রণালয় ধারাবাহিকভাবে নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। সচিব পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক হবে। ফাইল চালাচালি না করে সরাসরি বৈঠক করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন